'ঈর্ষা: হিংসে নয়, অনুকরণে আলোকিত'-নামটি যেন আমাদের মনোজগতে নতুন আলো জ্বালিয়ে দেয়। ঈর্ষা শব্দটি সাধারণত নেতিবাচক ভাবনার সঙ্গেই জড়িত, কিন্তু সাফিকা জহুরা জেসী এখানে এ শব্দটির মধ্যে এক নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছেন-অনুপ্রেরণার মশাল।
জীবন কতটুকু রঙিন কিংবা কতটুকু ধূসর, তা নির্ভর করে আমাদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। এই কাব্যগ্রন্থে জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ-সবকিছুই একটি নির্ভেজাল ক্যানভাসে রঙ তুলির মতো ফুটে উঠেছে। প্রতিটি কবিতা যেন জীবনের একেকটি ক্ষুদ্র গল্প, যেখানে যাপিত জীবনের পরম অনুভূতিগুলো কখনো শিহরণ জাগায়, কখনো চিন্তার সুরে মন ছুঁয়ে যায়।
তার কবিতা কখনো প্রতিবাদের সুর তোলে, কখনো আবার মন্থন করে জীবনের গভীর দর্শন। 'ভুলে যেও না আমরা স্বাধীন'-এখানে তিনি দেশের প্রতি তাঁর ক্ষোভ, প্রেম আর দ্রোহের মিশ্র অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। আবার 'উন্মাদনা' কবিতায় উঠে এসেছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার নিঃশব্দ বর্ণনা, যা পাঠককে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আত্মার গভীরে। 'নিজের মতো করে' কবিতাটি ভালোবাসার মুক্তস্বভাব এবং ত্যাগের অপূর্ব এক সংজ্ঞা, যেখানে কবি ভালোবাসার অধিকার ছাড়তে প্রস্তুত, কিন্তু অনুভবের গভীরতা থেকে পিছপা হন না।
এখানে প্রেম কেবল রোমান্টিক নয়; এটি এমন এক অনুভূতি, যা জীবনের নানা বাঁক নিয়ে প্রশ্ন তোলে। 'সুন্দরের মানে জানতে চাই' পাঠককে ভাবায় সৌন্দর্যের প্রকৃত মর্ম এবং 'রিওয়াইন্ড ফর কারেকশন প্লিজ' সময় ও স্মৃতি বোঝার এক মর্মস্পর্শী আকুতি।
সাফিকা জহুরা জেসী তাঁর কবিতায় শুধু অনুভূতিই নয়, জীবনের গভীর দর্শনও তুলে ধরেছেন। এখানে ঈর্ষা কেবল হিংসা নয়, বরং পরিপূর্ণতাকে খুঁজে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। তাঁর শব্দচয়ন, ভাবের গভীরতা, এবং হৃদয় ছোঁয়া প্রকাশভঙ্গি বইটিকে করে তুলেছে পাঠকের মনের দরজায় কড়া নাড়ার মতো।
'ঈর্ষা' কেবল একটি কবিতার বই নয়; এটি এক নান্দনিক যাত্রা। আশা করি, এই বইটি পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নেবে এবং জীবনকে নতুন করে দেখতে শেখাবে।
'ঈর্ষা'-একটি জীবনের আয়না, একটি সুর, যা পাঠককে ভাবায়, প্রশ্ন তোলে, এবং নতুন আলোর পথে আহ্বান জানায়।
সালমান হাবীব
কবিতায় গল্প বলা মানুষ