চারদিকে জোছনা ফিক ফুটছে। বাংলো থেকে বের হয়ে মাধবীলতা আগে আগে হেঁটে যায়। দ্রুত পায়ে মাধবীলতা হাঁটতে থাকে। পাহাড়ের প্রতি ইঞ্চি মাটি তার চেনা। রাতের বেলায় মাধবীলতার সাথে হাঁটতে গিয়ে লিজনের তাল সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। লিজন শ্রীমঙ্গলে থেকে পাহাড়ি জীবন যাত্রায় এখনও অভ্যস্ত হতে পারেনি।
তারা অতি সতর্কতার সাথে চা বাগানের ভেতর দিয়ে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে থাকে। পাহাড়ের কাছে পৌঁছে যায়। মানুষের কোনো অস্তিত্ব লক্ষণ দেখে বুঝার চেষ্টা করে। কিছুই পায় না। তার মন বলে এখনও আশা আছে। আবার সে পাহাড়ের পাথরের গায়ে কান পেতে কিছু শোনার চেষ্টা করে। সে কিছু বুঝতে পারে। চাঁদের আলোয় হাতের ইশারায় মাধবীলতা লিজনকে ডাকে। মাধবীলতাকে লিজন অনুসরণ করতে থাকে। এদিকটা বেশি জংলা। পথটাও সুবিধার নয়। লিজন হাঁপিয়ে উঠেছে। সে সমতলের মানুষ। তার পক্ষে এভাবে ছোটা কষ্টকরই বটে। মাধবীলতার কাছে এসব কোনো ব্যাপার নয়।
ওখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় গন্তব্যস্থলে একটা লোক তাদের পৌঁছানোর আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। তারা লোকটার পেছনে থাকার জন্য মাধবীলতা ও লিজন কেউই তার মুখ দেখতে পায় না। লেকটা এত তন্ময় হয়ে কাজটা করছিল যে, লিজনের তার দিকে ছুটে যাওয়ার কোনো শব্দই সে পায়নি। একদম কাছাকাছি হতেই সে চমকে ওঠে।
লোকটা লিজনের দিকে ফিরে তাকায়। পরস্পর পরস্পরের চোখাচোখি হয়। তারা একে অপরকে চিনতে পারে। লোকটার চোখে জ্বলে ওঠে ক্রোধ। খুনের নেশায় তার শরীরে অপার্থিব শক্তি এসে ভর করে। মাথা ঠান্ডা করে এক পলক লিজনকে দেখে নেয়। অমনি লিজনের বুকের কাছে একটা সজোরে শক্তিশালী লাথি উড়ে আসে। এক ফ্লাইং লাথির আঘাতে লিজন তখন ক্রিকেট বলের মতো বাউন্ডারি হয়ে গেল। পাহাড়ের ঢাল থেকে ছিটকে পড়ে এক পাথরের উপর। সেখান থেকে গড়িয়ে যায় নিচের দিকে।
চাঁদের আলো চারিদিক ভেসে যেতে থাকে। পাহাড়ের গায়ে একা এক তরুণী। তার প্রিয়জন তার চোখের সামনে চাঁদের আলোয় খুন হয়ে গেল নাকি সে নিশ্চিত নয়। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। অত বড় শরীরটাকে তার কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো শারীরিক শক্তি নেই। বাংলোয় গিয়ে সংবাদ দিতে গেলে লিজনের বডি কেউ সহজে সরিয়ে ফেলতে পারে। আবার বডি শেয়ালে টেনে নিয়ে যেতেও পারে। মাধবীলতা এখন কি করবে? জানতে হলে মাধবীলতার সাথে থাকতে হবে।