প্রাচ্যবাদ (Orientalism) মূলত একটি তাত্ত্বিক ধারণা, যা পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাচ্যের সংস্কৃতি, সমাজ এবং ইতিহাসের উপস্থাপনাকে বোঝায়। প্রাচ্যবাদে প্রাচ্যকে 'অপর' হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং পাশ্চাত্যকে মহৎ ও আধুনিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এটি প্রাচ্য সম্পর্কে একতরফা, পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে, যা সাংস্কৃতিক বৈষম্য এবং ক্ষমতার অসম সম্পর্ককে শক্তিশালী করে। মধ্যপ্রাচ্য, আরও স্পষ্টভাবে বললে আরব দেশে ইসলাম ধর্মকে ঘিরে বোঝাপড়ার মাধ্যমে প্রাচ্যবাদের ইতিহাস শুরু হয়। ক্রমশ তা বিদ্যায়তনিক সীমা পেরিয়ে ক্ষমতা, দখলদারিত্ব ও অপদস্থ করার হাতিয়ার হিসেবে বিকশিত হতে থাকে। একইভাবে প্রাচ্যবাদী রূপক বা প্রকাশভঙ্গি (tropes)' অন্য অঞ্চলেও ক্ষমতার প্রয়োজনানুসারে খাপ খাইয়ে নেওয়া হয়।
অতএব, প্রাচ্যবাদ শুধু একাডেমিক একটি তত্ত্ব নয়; এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটি মানসিকতা, যা প্রাচ্যকে ('পূর্ব') পাশ্চাত্যের ('পশ্চিম') তুলনায় ভিন্ন, রহস্যময় এবং প্রায়শই নিম্নতর হিসেবে উপস্থাপন করে। এডওয়ার্ড সাঈদ তাঁর আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ 'অরিয়েন্টালিজম'-এ (১৯৭৮) দেখিয়েছেন যে প্রাচ্যবাদ কেবল সাহিত্য, শিল্পকলা বা শিক্ষায় সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি এফটি ক্ষমতার মাধ্যম হিসেবে ঔপনিবেশিক শাসনকেও সমর্থন। জুগিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, উনবিংশ শতাব্দীতে রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের কবিতা 'সাদা মানুষের বোঝা' (The White Man's Burden) প্রাচ্যের মানুষকে অসহায় এবং পাশ্চাত্যের মানুষকে ত্রাণকর্তা হিসেবে চিত্রিত করে।
প্রাচ্যবাদের ধারণাটি সময়ের সাথে বিবর্তিত হয়েছে। ঔপনিবেশিক যুগের সরলীকৃত ও রোমান্টিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে আধুনিক যুগে এটি আরও জটিল ও রাজনৈতিক রূপ ধারণ করেছে। ৯/১১-পরবর্তী বিশ্বে নয়া-প্রাচ্যবাদ (Neo-Orientalism) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যেখানে মিডিয়া, রাজনীতি এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতি প্রাচ্যের প্রতি নতুন স্থিরধারণা (stereotype) তৈরি করছে। একই সঙ্গে উত্তর-প্রাচ্যবাদ (Post-Orientalism) এই পূর্বধারণাগুলোর যুক্তিযুক্ত সমালোচনা করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।
নয়া-প্রাচ্যবাদ আধুনিক সময়ে প্রাচ্যবাদের পুনরুত্থান হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রায়শই ৯/১১-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বেশি আলোচিত হয়েছে। মিডিয়াতে ইসলাম এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে এটি নতুনভাবে প্রকাশ পায়। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন টিভি সিরিজ 'হোমল্যান্ড'-এ মুসলিম চরিত্রগুলোর নেতিবাচক উপস্থাপন একটি স্পষ্ট নয়া-প্রাচ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ডিসকোর্সগুলোতেও নয়া-প্রাচ্যবাদের ছাপ স্পষ্ট, যেমন 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ধারণাটি।
নব্বইয়ের দশকের কথাসাহিত্যিক ফকরুল চৌধুরী। পিতা আবদুল মান্নান চৌধুরী, মাতা তফরুন বেগম। জন্ম চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বর্তমানে সাংবাদিকতায় নিয়োজিত। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিল্পসমালোচনা ও সম্পাদনায় তাঁর সমান দক্ষতা। শিশুতোষ বিজ্ঞান লেখক হিসেবেও সুপরিচিত। উত্তর-ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বিশে কিছু কাজ ও লেখালেখি রয়েছে। সিভিল সোসাইট নিয়ে তার একটি সমৃদ্ধ সম্পাদনাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে লিখে থাকেন। তবে ছোটকাগজে লিখতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ভ্রমণ তাঁর প্রিয় শখ। নিত্যসঙ্গী বই, নেশা বই পড়া।