বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও পালনকর্তা মহান রবের পক্ষ থেকে জগতবাসীর উদ্দেশ্যে প্রেরিত চিরায়ত জীবনবিধান ও আসমানী পথনির্দেশ হলো আল-কুরআনুল কারীম। কুরআন এসেছে অজ্ঞতার ঘন অন্ধকার চিরে দুনিয়াকে ওহীর আলোয় স্নাত করতে; বিশ্বমানবতাকে মুক্তির দিশা দেখাতে।
কুরআন মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত, মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত আর গোটা মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক। অন্তরের ব্যাধি থেকে শুরু করে জাগতিক জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান রয়েছে কুরআনের মধ্যেই। তবে এসব সমাধান পেতে হলে কুরআনের মর্মার্থ গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে, তাদাব্বুর করতে হবে কুরআনের আয়াতসমূহ নিয়ে। ডুব দিতে হবে কুরআনের গভীর থেকে গভীরে।
কুরআনের অর্থ হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলে অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও অনুরাগ জন্ম নেয়। এর মধ্য দিয়েই অর্জিত হয় আত্মার পরিশুদ্ধি, হৃদয়ের পরিতৃপ্তি আর তাকদীরের ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্টি। কুরআন বোঝার মধ্য দিয়েই তৈরি হয় ইয়াক্বীন ও সুদৃঢ় বিশ্বাস, বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্কের দৃঢ়তা, দ্বীনি আত্মমর্যাদাবোধ, আখিরাতের ফিকির এবং আল্লাহর পরিপূর্ণ প্রতিদান লাভের সজীব প্রত্যাশা।
এই বইটি শুধুমাত্র কুরআনের অনুবাদ নয়— কুরআনের অর্থ-মর্ম অনুধাবন, আয়াতসমূহ নিয়ে তাদাব্বুর ও গভীর চিন্তা-ফিকির এবং কুরআন থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা, নির্দেশনা ও করণীয় করণীয় আহরণের এক সমৃদ্ধ সহায়িকা ও সুবিন্যস্ত পরিবেশনা। প্রত্যেকটি আয়াতের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, প্রেক্ষাপট এবং শিক্ষা পাঠকের হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে দেওয়ার লক্ষ্যে রচিত হয়েছে এ গ্রন্থটি। এখানে রয়েছে:
v সরল ও সাবলীল ভাষায় আয়াতের অনুবাদ
v নির্বাচিত আরবি শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা
v তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে সুসংক্ষিপ্ত তাফসীর
v চিন্তার খোরাক জাগানো ‘তাদাব্বুর’মূলক আলোচনা
v আয়াত থেকে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও করণীয় নির্ধারণ
v আমলের ক্ষেত্রে সহায়ক দিকনির্দেশনা
v তাদাব্বুর বিষয়ক অনুশীলনী
এই গ্রন্থের মাধ্যমে পাঠক কুরআনের আলোয় জীবনের প্রতিটি দিককে রাঙিয়ে তোলার দিকনির্দেশনা পাবেন। যারা কুরআনের গভীর মর্ম অনুধাবন করে জীবন জীবন গঠনে আগ্রহী, যারা আয়াত থেকে সরাসরি আমলের জন্য দিকনির্দেশনা খোঁজেন, যারা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া তাদাব্বুরের চর্চা করতে চান– তাদের সকলের জন্য এই গ্রন্থ। ফলে কুরআনের হিদায়াতে জীবন সাজানোর সোনালী রাজপথে আপনার সোভাগ্যমাখা পথচলার সূচনা হতে পারে এই বইটি দিয়েই।
ইমাম ইবনু কাইয়্যিমিল জাওযীয়া (রহঃ) ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ, ফকিহ, তাফসীরবিদ, হাদীসজ্ঞ এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের পণ্ডিত। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল আবু আব্দুল্লাহ্ শামসুদ্দ্বীন মুহাম্মাদ বিন আবু বকর বিন আইয়্যুব আদ দিমাশকী। তিনি ৬৯১ হিজরী সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর পিতা দীর্ঘ দিন দামেস্কের আল জাওযীয়া মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বলেই তাঁর পিতা আবু বকরকে قيم الجوزية কাইয়্যিমুল জাওযীয়াহ অর্থাৎ মাদরাসাতুল জাওযীয়ার তত্ত্বাবধায়ক বলা হয়। পরবর্তীতে তাঁর বংশের লোকেরা এই উপাধীতেই প্রসিদ্ধি লাভ করে। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমীয়া (রহঃ)-এর স্নেহধন্য শিষ্য ছিলেন এবং শাইখের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁর সাথেই ছিলেন। এমনকি জিহাদের ময়দান থেকে শুরু করে জেলখানাতেও তিনি তাঁর থেকে আলাদা হননি। তিনি ইসলামী আকীদাহ, তাওহীদ, সুন্নাহ ও বিদআত-বিরোধী বিভিন্ন বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। তার মধ্যে তাওহীদ ও সুন্নাহের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং ইবাদত-বন্দেগীতে নিষ্ঠা ছিল অন্যতম। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
"যাদুল মা‘আদ ফী হাদ্য়ী খাইরিল ইবাদ"
"মাদারিজুস সালিকীন"
"শিফাউল আলীল"
"তিবেব নববী" (চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর অনন্য অবদান)
তাঁর উস্তাদ বৃন্দ -
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) যে সমস্ত আলেম-উলামার কাছ থেকে তালীম ও তারবীয়াত হাসিল করেন, তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়াহ (রহঃ)।
আহমাদ বিন আব্দুদ্ দায়িম আল-মাকদেসী (রহঃ)।
তাঁর পিতা কাইয়্যিমুল জাওযীয়াহ (রহঃ)।
আহমাদ বিন আব্দুর রহমান আন্ নাবলেসী (রহঃ)।
তাঁর ছাত্রসমূহ -
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এর হাতে যে সমস্ত মনীষী জ্ঞান আহরণে ধন্য হয়েছিলেন, তাদের তালিকা অতি বিশাল। তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
বুরহান উদ্দ্বীন ইবরাহীম বিন ইবনুল কাইয়্যিম।
ইমাম ইবনে রজব (রহঃ)।
হাফিয ইমাম ইবনে কাছীর (রহঃ)।
তিনি একজন নিরলস সাধক, যিনি দীর্ঘ সময় ইবাদত করতেন, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ ও কুরআন তিলাওয়াতে মগ্ন থাকতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ইলমী ও আধ্যাত্মিক খেদমত মুসলিম উম্মাহর জন্য অমূল্য দান হয়ে রয়েছে। ইবনুল কাইয়্যিম ৭৫১ হিজরী সনে মারা যান এবং দামেস্কের বাবে সাগীর গোরস্থানে তাঁর পিতার পাশে দাফন করা হয়।