ইসলামের দৃষ্টিতে ‘আকীদাহ-বিশ্বাস একজন মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা তার যেকোনো আমল ও কাজকর্ম বিশুদ্ধ হয়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ ‘আকীদাহ-বিশ্বাসের ওপরই নির্ভরশীল। আমাদের ক্ষুদ্র বিবেচনায় এ বিশুদ্ধ ইসলামী ‘আকীদাহ-বিশ্বাসের হাজারো শত্রুর মধ্যে অন্যতম মারাত্মক শত্রু হচ্ছে, ‘শিরক’। এটি তাওহীদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঈমানী শক্তিকে নস্যাৎকারী। এটি একজন মু’মিনকে ইসলামের জান্নাতী ছায়া থেকে সংগোপনে বের করে মুশরিকদের জাহান্নামী বেলাভূমিতে নিক্ষেপ করে। কোনো শত্রুকে পরাভূত করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, সে শত্রুর ধরন, প্রকৃতি, ভয়াবহতা, কৌশল প্রভৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান লাভ করা। সে লক্ষ্যে একজন মুসলিমের ঈমান ও ‘আকীদাহ-বিশ্বাসের ভয়াবহ দুশমন ‘শিরক’কে সবার সম্মুখে স্পষ্টাকারে তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে তুলে ধরাই হচ্ছে এ গ্রন্থের মূল উদ্দেশ্য। সুখকর স্বপ্নের সেই জান্নাত পেতে হলে এসব ঈমানবিরোধী শিরকী কর্মগুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে। যারা মূলত এসব কাজে নিমগ্ন হয়, তারা জান্নাতের সামান্য সুগন্ধটুকুও পায় না। কাক্সিক্ষত জান্নাত তাদের থেকে হারিয়ে যায়। তারা হয় জাহান্নামী। যারা এসব কাজে নিমগ্ন থাকে, তাদের অনিবার্য পরিণতি হয় জাহান্নামের লেলিহান শিখা। তাদের নিশ্চিত ঠিকানা হয় জাহান্নামের অতল গহ্বর। তাদের আবাসস্থল হয় জাহীম কিংবা হাবীয়ার অতলান্তিকে। ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় জাহান্নামের নিকৃষ্ট ঠিকানায় হাত ধরে পৌঁছে দেওয়া এ ভয়াবহ উপলক্ষ্যকে যথার্থভাবে জানা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। এ মহাশত্রুকে চেনা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। এ শত্রু থেকে বেঁচে থাকাই হচ্ছে একজন বুদ্ধিমান মুসলিমের মূল কাজ। সে ঈমানী দায়িত্ব ও মূলকাজটি ভালোভাবে রপ্ত করানোই হচ্ছে আমাদের এ গ্রন্থ রচনার অভীষ্ট লক্ষ্য। জান্নাতের পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী এ জঘন্য কাজ প্রত্যাখ্যান করার দুঃসাহসিক সৈনিক তৈরি করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা ও করানোই হচ্ছে এ গ্রন্থ রচনার আসল উদ্দেশ্য। সাধারণ ও গবেষক উভয় শ্রেণির সম্মানিত পাঠকমণ্ডলী যাতে এ গ্রন্থ থেকে উপকৃত হতে পারেন, সে দিকে লক্ষ্য রেখে এখানে সাধারণ তথ্য সরবরাহের সাথে সাথে যথাযথ সূত্রের উল্লেখসহ মূল উদ্ধৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনো বিষয়ে আমাদের মনীষীদের মধ্যে একাধিক মত থাকলে সে ক্ষেত্রে তাদের দলিল-প্রমাণাদিসহ উপস্থাপন করে নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে বিশুদ্ধ ও প্রাধান্যযোগ্য মতকে তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, আরবী শব্দের প্রতিবর্ণায়নে আধুনিক রীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে।