গীবত বা পরনিন্দা বইটি মূলত ইসলামী মূল্যবোধ, আচার-আচরণ এবং সামাজিক শিষ্টাচারের উপর একটি বিস্তারিত আলোচনা। বইটির লেখক গীবত এবং পরনিন্দার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, এবং সমাজে এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। এটি পাঠককে বুঝতে সাহায্য করে কেন গীবত বা পরনিন্দা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং কেন এর মাধ্যমে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
বইয়ের মূল বিষয়:
১. গীবত বা পরনিন্দার সংজ্ঞা: গীবত বলতে বুঝানো হয় অন্য ব্যক্তির অজান্তে তার খারাপ দিক, দুর্বলতা, বা ত্রুটি সম্পর্কে কথা বলা। এটি এমন একটি কাজ যা অন্যের সম্মান হরণ করে এবং তার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরনিন্দা মূলত অন্যের পেছনে গীবত করার চেয়ে একটু ভিন্ন, তবে এর ক্ষতি একেবারে একই রকম।
২. কুরআন এবং হাদীসে গীবত: বইটি কুরআন এবং হাদীসের আলোকে গীবত ও পরনিন্দার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। যেমন কুরআনের সুরা হুজুরাত-এ বলা হয়েছে, "তোমরা একে অপরের পেছনে গীবত করো না; তোমরা কি তোমাদের মৃত ভাইয়ের মাংস খাচ্ছো?" (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১২)।
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "গীবত করার সময়, তোমার পেছনে যেটা বলছো, তা যদি সে শুনে ফেলত, তাহলে তাকে কষ্ট দিতো।"
৩. গীবতের ক্ষতিকর প্রভাব: গীবত শুধু অন্যের সম্মান নষ্ট করে না, বরং এটি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। এটি মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করে, সম্পর্ক নষ্ট করে এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। বইটি এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছে, কেন গীবত মানুষের আত্মার জন্য ক্ষতিকর এবং এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
৪. গীবত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়:লেখক গীবত থেকে বাঁচার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে:
- অন্যদের ভালো দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা।
- গীবত করা থেকে বিরত থাকা এবং যদি accidentally এমন কিছু হয়ে যায়, তবে তাওবা করা।
- পরস্পরের মধ্যে সহানুভূতি ও ভালোবাসা তৈরি করা।
- গীবতকে শুধুমাত্র একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে না দেখে, আত্মিক শুদ্ধতার প্রয়াস হিসেবে দেখাও উপদেশ দিয়েছেন।
৫. গীবত বা পরনিন্দা সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি: ইসলামে গীবত একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হয়, যা কেবল একজন ব্যক্তির সম্মানই নষ্ট করে না, বরং সমাজের শান্তি ও ঐক্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যেমন, প্রতিবাদ বা সঠিক তথ্য দেওয়া কিছু সীমিত পরিস্থিতিতে গীবত বৈধ হতে পারে।
৬. প্রতিকার ও সংশোধন: বইটিতে গীবত বা পরনিন্দার প্রতিকার হিসেবে তাওবা, আত্মবিশ্লেষণ, এবং মানুষের মধ্যে ভালো সম্পর্কের উন্নতি করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এটি মুসলিম সমাজের সদস্যদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা, যাতে তারা সমাজে শান্তি এবং সহনশীলতা বজায় রাখতে পারে।
বইটির মূল বার্তা:
বইটি পাঠকদেরকে সাবধান করে দেয় যে, গীবত বা পরনিন্দা আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে বড় ধরনের ক্ষতি করে। ইসলামে এই কাজটি নিষিদ্ধ, কারণ এটি একজন মুসলিমের মনোবল, আত্মসম্মান, এবং সমাজের ঐক্যকে নষ্ট করে। বইটির মাধ্যমে লেখক আমাদের জানাতে চেয়েছেন যে, গীবত থেকে বিরত থাকা এবং সমাজে শান্তি বজায় রাখা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।