“আলোকহীন বৃষ্টি” রিফাত মাহবুব সাকিবের লেখায় একটি সংগ্রামী মেয়ের গল্প ফুটে
উঠেছে। গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হল একটি কালো গায়ের মেয়ের নাম বৃষ্টি, যিনি মফস্বলের এক
কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকেই বাইরের দুনিয়ার বক্রভাবে বিচার
করতে দেখা যায় তাকে, বিশেষ করে তার গায়ের রং নিয়ে। তবে, তার মাতা মমতা তাকে
শিক্ষা দেন যে, মানুষের মূল্য তার কাজ এবং মানবিক গুণে।
বৃষ্টির শিক্ষা ও মেধা তাকে স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে আলাদাভাবে উজ্জ্বল করে। বিতর্ক উপলক্ষ্যে
সে দৃঢ়তার সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু সমাজের সংকীর্ণতা তার
ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। পেশাদারী জীবনে উন্নতির জন্য বৃষ্টি গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়
এবং শহরের কলেজে ভর্তি হয়।
কিন্তু শহরের নতুন পরিবেশে এসে সে তার গায়ের রং নিয়ে বিদ্রুপের শিকার হতে থাকে।
যেসব অপমান তাকে তার গ্রামে সম্মুখীন করতে হয়েছিল, সেগুলো পুনরায় তার সামনে এসে
দাঁড়ায়। সে সহ্য করে যায়, যদিও তার অন্তরে ক্ষত সৃষ্টি হয়। একসময়, একটি প্রেমের
সম্পর্কের মাধ্যমে সে নতুন প্রেরণার উৎস পায়। কিন্তু ছেলেটির অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কের
কথা জানতে পেরে বৃষ্টি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
বৃষ্টি তার বড় আপুর সমর্থনে সামনের দিকে চলতে থাকে, তার স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকারে।
বৃষ্টির জীবন একটি কঠিন এবং সংগ্রামী পথের বর্ণনা, যেখানে তার লক্ষ্য ছিল একটি বড়
চাকরি পাওয়া এবং সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করা। চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার মুখে, বৃষ্টি তার
পরিশ্রম, দক্ষতা, এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরি করতে চায়।
একটি বড় কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার পর, সে কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। তবে,
সহকর্মীদের বিদ্বেষ এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।
শেষে, বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তার প্রতি অবজ্ঞার কারণে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং
সমাজ সেবার দিকে মনোনিবেশ করে।
বৃষ্টি এরপর নানা সমাজসেবা প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষার এবং স্বাস্থ্যের জন্য কাজ
করতে থাকে এবং বর্তমানে তার “নতুন সূর্য” উদ্যোগ মেয়েদের জীবন বদলে দেওয়ার কাজে
গুরুত্ব পেয়েছে। সমাজের লোক জন আজ তাকে সম্মান করে। বৃষ্টির জীবনে এই পরিবর্তন
সমাজে তার প্রতিষ্ঠার এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। অবশেষে, সে সম্পূর্ণ নতুন দিগন্তে
একটি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে সে আত্মবিশ্বাস এবং কাজের মাধ্যমে
সমাজে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।
একটি সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে তার সংগ্রামী জীবনের অধ্যায়টি শেষ হয়, কিন্তু তার কাজ
এবং প্রভাব সমাজে চিরকালীন হয়ে থাকে। গল্পে বৃষ্টির সংগ্রাম, সফলতা, প্রেম ও দুর্ঘটনার
আবহের মাধ্যমে মানুষের মানসিকতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এই কাহিনী আমাদের শেখায় যে, আসল সৌন্দর্য আসে একান্ত অভ্যন্তরীণ থেকে, যা
দৃষ্টিশক্তির উপেক্ষা করে জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে।