হঠাৎ যদি বৃষ্টি আসে
রণজিৎ মোদক
আমাদের বরযাত্রীর বাস তখনো কনের পিত্রালয়ে পৌছেনি
সকাল দশটায় বরযাত্রী নিয়ে নারান্দিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে
জামালপুর হয়ে সরাসরি ঝগড়ারচর মোদকপাড়া।
বাসে মাইক সেট করা গানের শব্দ আর বরযাত্রীদের আনন্দ কোলাহল।
সড়ক পথের; দু’পাশে গাছ-পালা পাক-পাখালী
সবাই জেনে যাচ্ছে এক আনন্দ মিছিল যাচ্ছে।
আষাঢ় মাস ২৬ তারিখ বুধবার।
আকাশ পরিস্কার মেঘের তেমন
আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না।
আজ থেকে ৪২ বছর পূর্বের কথা।
জামালপুর খেয়াপাড় হয়ে শেরপুরের পথে আমাদের বাস।
ইতিমধ্যে কামালপুর আাসার পর সড়ক পথে বর্ষার জল।
বাস আর যাবে না।
ব্রহ্মপুত্রের উপচে পরা জল স্রোত,
স্হানীয় এক বালিকা জলে ডুবে মারা গেছে।
লাশ নিয়ে তার আত্মীয় স্বজনরা কান্নাকাটি করছে।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
স্হানীয় লোক জন নৌকা দিয়ে লোক জন পাড় করছে।
বাস রেখে আমরাও নৌকা পড় হয়ে যাত্রা শুরু
কর লাম পদব্রজে।
ঝগড়ারচর কত দুর?
সহনীয় লোকজন বলছে এই সামনেই।
কতদূর হবে এই এক মাইল।
দুই মাইল যাওয়ার পরও এক মাইল শেষ হয় না।
গ্রামের মধ্যদিয়ে কাঁচা সড়ক পথ।
অনেকটা রাত লোকজন তেমন চলাচল নেই।
খানাখন্দ ভরা সড়ক পথ।
তখন মোবাইল ফোন ছিল না।
অনেক ভাগ্য গুণে এক গ্যারেজ থেকে
একটা রিক্সা বলে কয়ে বেশ মূল্য দিয়ে ঠিক করা হলো।
কিছু দুর যাওয়ার পর বরবহন রিক্সার মাঝখানে ভেঙে দু-খান।
অবশেষে বিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে রাত নয়/দশটা।
বরযাত্রীদেরও পেটের বারটা বেজে গেছে।
চু চু করছে পেট।
গেইটে কনে পক্ষের সুন্দরীদের দাবী দাওয়া মিটিয়ে
সাজনাতলায় বর শ্রীমানকে রেখে সবাই গোডাউনে মিষ্টি লুচি পুরী
চা পর্ব শেষ করছে।
শেষ তো এখানেই নয়।
বিয়ের যত মন্ততা পুথি-পত্র ঘেঁটে পুরহীত
উচ্চারণ করে যাচ্ছেন।
তারপর মাল্যদান পর্ব লৌকিকতার অন্ত নেই এখানে।
কনে পক্ষ কিছুতেই হার মানবে না।
বিয়ের উপহার পাঠে নাইয়রীদের সাবধান করে দেয়া হয়েছে।
নাইয়রীরা মনে মনে অনেক খুশী।
বাসী বিয়ের পর কন্যা বিদায়ের সময় কান্নাকাটি ঢল।
এ যেন আষাঢ় মাসের বিষ্টি এমন কান্নাকাটির
দৃশ্য আজ কাল তেমন চোখে পরে না।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর আমাদের যাত্রা শুরু হয়।
রিকশা যোগে কামালের চর এসে আমাদের রিজার্ভ বাসে
রওনা দিলাম। রাত দশ/এগারোটায় নারান্দিয়া বাসস্ট্যান্ডে পৌছালো
বরযাত্রী বহনকারী বাস।
পূর্ব থেকেই আমাদের বরণ করার জন্য
অপেক্ষা করতে ছিল গ্রামের আত্মীয় স্বজনরা।
বাস থেকে নামার সাথে সাথেই সব বাজি বাজনা থেমে গেল।
আমরা যেদিন বিয়ে অনুষ্ঠানে যাত্রা করি সেই দিন বিকেলে পুকুর থেকে
হাঁস তুলে আনতে গিয়ে আমার বড় ভাই দীপেশ বেলুদার
একমাত্র সাত বছর বয়সী ভাস্তি বিউটি পুকুরে ডুবে মারা যায়।
কিন্তু ওর সাথে হাঁস আনতে যাওয়া স্বর্গীয় অমৃত লাল মোদক দাদার
একমাত্র পাঁচ বছর বয়সী ছেলে গৌতম বেঁচে যায়।
আমার বিয়ের সমস্ত আনন্দ বিউটির বিদায় বেদনায় অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পরছিল।
প্রতিটি বিয়ে বার্ষিকী দিনে ক্ষনিকের অতিথি আমার বংশের বিউটিকে মনে পরে
ঠাকুর কৃপানিধি ওই ছোট্ট মেয়ে বিউটি র আত্মার শান্তি দিও।