বর্তমান গবেষণাধর্মী গ্রন্থের ১ম খণ্ডে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত মোট তিনটি অধ্যায়ে পূর্ববঙ্গের বাংলা ভাষা আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি এ পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত এক গুচ্ছ চিঠিপত্র, উর্দু ভাষার পক্ষে জোরালো সওয়াল এ সবই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদে কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পরিষদে কথা বলার জন্য ইংরেজি, উর্দুর সঙ্গে বাংলা- ভাষাকেও যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে পাক প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান ধীরেন্দ্রনাথ দত্তে-র উদ্দেশ্যে প্রাদেশিকতা, সাম্প্রদায়িকতা যুক্ত বাক্যবাণে বিদ্ধ করেন। পূর্ববঙ্গের মানুষ এর প্রতিবাদ করেন।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষও ঘটে এ পর্বেই। মূলত গোটা আন্দোলন পরিচালিত হয় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সংবাদপত্রের একাংশ ও রাজনীতিবিদদের একাংশের অংশগ্রহণে। এসবেরই চালচিত্র বর্তমান খণ্ড।
২য় খণ্ড
বর্তমান খণ্ডে অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে ১৯৫২ সাল ও বায়ান্ন উত্তরকাল। এই পর্বে পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলন কেবল ঢাকা নয়—সমগ্র পূর্ববঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে উর্দুভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার অঙ্গীকারের প্রতিবাদে। এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশ প্রথম গুলিচালালে অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়। হত্যার প্রতিবাদে মানুষ পথে নামলে ২২ ফেব্রুয়ারিতেও পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালালে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
সরকারের জেল-জুলুম, হত্যার পরও বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। বাংলাভাষার স্বীকৃতি পাওয়া যায় ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে।
বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'। সমগ্র বিশ্বের সকল ভাষাভাষীর মানুষ এ দিনটি স্মরণ করেন। এ গর্ব সকল বাঙালির, সকল দেশের সকল মানুষের।
Title
পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলন: সংবাদপত্রের ভূমিকা ও ইতিহাস ১-২ খণ্ড
ড. সুকুমার বিশ্বাসের জন্ম ১৯৪৫ সালে। ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পােস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। কিন্তু এখানেই গবেষকদের গবেষক’ নামে খ্যাত ড. বিশ্বাসের গবেষণাকার্য শেষ হয় না। পরবর্তীকালে জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইনস্টিটিউট অব ডেভলপিং ইকনমিজ-এ ফেলাে হিসেবে এবং হিরােশিমা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া টোকিয়াে ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজ-এ ওরাল হিস্ট্রি অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমীতে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘ তিরিশ বছর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তন্নিষ্ঠ গবেষণার পাশাপাশি উভয় বাংলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রামাণ্য ইতিহাস রচনাও তার অন্যতম কৃতিত্ব। ড. বিশ্বাসের উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হল : বাংলাদেশের নাট্যচর্চা ও নাটকের ধারা ১৯৪৭-১৯৭১, অসহযােগ আন্দোলন '৭১ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী, একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সিপিআইএম ও গণশক্তি, Communal Riots in Bangladesh and West Bengal 1947-1964, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আগরতলা ত্রিপুরা : দলিলপত্র, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: নারী, প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারীর বিবরণ।