‘জৈন্তার ভুলে যাওয়া ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বইটি একটি ঐতিহাসিক, গবেষণাভিত্তিক, এবং সংরক্ষণমূলক প্রয়াস। লেখক মাওলানা মোহাম্মদ উছমান গণি নিজস্ব অধ্যয়ন, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও দীর্ঘ দিনের গবেষণাকে ভিত্তি করে জৈন্তা অঞ্চলের বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাস, ইসলামী ঐতিহ্য, এবং সূফি-আলেমদের আত্মত্যাগ ও অবদান তুলে ধরেছেন। প্রাচীন রাজ্য জৈন্তার রাজনৈতিক উত্থান-পতনের পাশাপাশি ইসলামী জাগরণ ও আলোকিত ব্যক্তিত্বদের পরিচয় পাঠককে এক বিরল ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় পৌঁছে দেয়।
প্রথম খণ্ড : ইতিহাসের পটভূমি ও বিশ্লেষণ
বইয়ের প্রথম খণ্ডে জৈন্তা রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাস, খাসিয়া রাজাদের বিবরণ, এবং রাজা রাজেন্দ্র সিংহের সময়কালে রাজ্যের পতনের গল্প উঠে এসেছে। লেখক ঐতিহাসিক বাস্তবতায় দেখিয়েছেন কিভাবে কুসংস্কার, নরবলির মতো মানবতাবিরোধী প্রথা এবং খোদাদ্রোহী কাজ একসময়ের উন্নত রাজ্যকে ধ্বংস করে দেয়।
১৮৩৫ সালে ব্রিটিশদের হাতে পতনের পর অঞ্চলটিতে মুসলমানদের পুনর্বাসন এবং ধর্মীয় পুনর্জাগরণ শুরু হয়। তখন থেকেই ইসলামী চিন্তা ও জ্ঞানচর্চার নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়।
দ্বিতীয় খণ্ড: আলোকিত মানুষের কাহিনি
বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ড জৈন্তার সূফি-আলেমদের জীবন-কর্ম, ইসলামী শিক্ষা বিস্তার, ও সমাজ সংস্কারে তাঁদের অসামান্য অবদান নিয়ে লেখা এক বিশাল তথ্যভান্ডার। ৭০ ইসলামী ব্যক্তিত্বের জীবনী এবং তাঁদের কর্মের স্মরণীয় দলিল এই অংশ।
লেখক তাঁদের ত্যাগ, সংগ্রাম, চিন্তাভাবনা ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন, যেগুলো পাঠককে অনুপ্রাণিত করে। আলেমদের পাশাপাশি সমাজ ও রাজনীতিতে অবদান রাখা ৩০ জন অমর ব্যক্তিত্বেরও সংক্ষিপ্ত জীবনী স্থান পেয়েছে বইটিতে, যা এই বইকে শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সামগ্রিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
লেখার ভঙ্গি ও ভাষা :
মাওলানা উছমান গণির ভাষা প্রাঞ্জল, সহজবোধ্য এবং তথ্যনির্ভর। লেখার মধ্যে একটি আত্মিক টান আছে, যেটা পাঠককে ব্যক্তিগতভাবে সংযুক্ত করে তোলে। তাঁর গভীর গবেষণার ছাপ সুস্পষ্ট, কিন্তু পাঠ্যকে তিনি কখনও একঘেঁয়ে বা অতিরিক্ত তথ্যবহুল করে তোলেননি।
ইতিহাসের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা রয়েছে, যা পাঠককে চিন্তা ও উপলব্ধির সুযোগ করে দেয়।
অজানা বা অবহেলিত নামগুলোকে সামনে এনে লেখক একপ্রকার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা পালন করেছেন।
প্রাচীন ঐতিহ্য ও ইসলামি মূল্যবোধের সংমিশ্রণে বইটি হয়ে উঠেছে এক দার্শনিক ও গবেষণামূলক দলিল।
‘জৈন্তার ভুলে যাওয়া ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শুধু একটি বই নয়, বরং জৈন্তার আত্মপরিচয়ের সংরক্ষক এক ঐতিহাসিক দলিল। এটি ইতিহাসপ্রেমী, গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাধারণ পাঠকের কাছে এক মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে।