ক্যান্সার : কালোবৃষ্টির কান্না — জীবনের শেষ লড়াইয়ের দলিল
শফিকুল আজম শুধু একজন লেখক বা গবেষক ছিলেন না—তিনি ছিলেন একজন অনন্য মননশীল চিন্তাবিদ, যিনি কলমের শক্তিকে জীবনের কঠিনতম মুহূর্তেও ছেড়ে দেননি। তাঁর জীবনের শেষ কটি বছর ছিল এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ানোর লড়াই। সেই লড়াই ছিল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে—এক অনির্বচনীয়, যন্ত্রণাময় ও ব্যয়বহুল যুদ্ধ।
এই যুদ্ধের মাঝেই তিনি লিখেছিলেন "ক্যান্সার : কালোবৃষ্টির কান্না"—একটি ব্যতিক্রমী আত্মকথন, একটি অন্তর্মুখী বিষাদস্নাত দলিল, যা শুধু ক্যান্সার রোগীর ব্যথা নয়, বরং সমাজের নিঃসহায়তার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন কেমোথেরাপির শারীরিক যন্ত্রণা, মানসিক ভাঙন, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং নিঃসঙ্গতার গভীর অনুভব।
বইটি শুধু একজন রোগীর অভিজ্ঞতা নয়, এটি এক লেখকের আত্মজিজ্ঞাসা, একজন মানবিক কণ্ঠের সর্বশেষ উচ্চারণ। শফিকুল আজম নিজে বলেছেন, ক্যান্সার মানে শুধু রোগ নয়, এটি সমাজ, চিকিৎসা ব্যবস্থার এবং সহানুভূতিরও পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় অনেক কিছু হারিয়েও তিনি এক অসাধারণ সাহস ও শক্তি নিয়ে এগিয়ে গেছেন।
তিনি জানতেন, সময় অল্প। তবু তিনি থামেননি। ব্যয়বহুল চিকিৎসা, শারীরিক দুর্বলতা, এবং মৃত্যুর ছায়াকে পাশ কাটিয়ে তিনি শেষ সময় পর্যন্ত লিখেছেন—লিখেছেন নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের কান্না, নিজের উপলব্ধি।
এই বই একদিকে যেমন চিকিৎসা ও রোগ-সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে, তেমনি অন্যদিকে এটি সাহস, সহনশীলতা ও জীবনপ্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
শফিকুল আজম চলে গেছেন, কিন্তু ক্যান্সার: ‘কালোবৃষ্টির কান্না’য় তাঁর প্রতিধ্বনি রয়ে যাবে চিরকাল।