অমাবস্যার রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকার। রোমান কবরস্হানের ভিতর প্রবেশ করে। কবরস্থানটি জঙ্গলে ভরা। চারিদিকে সুনসান নীরবতা। কেমন যেন ভূতুড়ে পরিবেশ। রোমান আনমনে যেতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে একটা সাদা বিড়াল চোখের নিমিষে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পার হওয়ার সময় বিরাট আকার ধারণ করে। সে মনে মনে ভাবে, কোনো সাধারণ বিড়াল কখনোই এতো দ্রুত যেতে এবং বিরাট আকার ধারণ করতে পারেনা। এটা হয়তো কোনো ভূত হবে।
এসময় রোমান দেখে বিরাট আকার ধারণকৃত বিড়ালটি রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখগুলো লাল এবং আগুনের মতো জ্বলজ্বল। চওড়া মুখের দাঁতগুলো খুব ধারালো। রোমান অস্বস্তিবোধ করে বিড়ালটির দিকে তাকায়। কিন্তু একি? বিড়ালটি চোখের নিমিষে কঙ্কালের রুপ ধারণ করে হি হি করে হাসছে । মুখে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। এদৃশ্য দেখে রোমানের শরীর ভয়ে ছম ছম করে শিহরে উঠে বুকে কাঁপন ধরে।
এসময় কঙ্কালটি হেঁড়ে গলায় রোমানকে উদ্দেশ্য করে বলে, কি রে ছোকরা! এতো রাতে কবরস্থানে এসেছিস কেন। এটা কি ঘোরার জায়গা? অবশ্য এসে তুই ভালো করেছিস। বিড়ালের রুপ ধরে দৌড়াদৌড়ি করার কারণে আমার পিপাসা লেগেছে। তোর রক্ত পান করে পিপাসা মিটাবো। এরপর কয়েকদিন ধরে তোর মাংস শরীর থেকে ছিড়ে ছিড়ে খাবো। উহ্! কি মজাই না হবে? মানুষের মাংসের খুব স্বাদ। কঙ্কালটির কথা শুনে রোমানের শরীর থরথর করে কেঁপে হাত-পা অবশ হয়ে যায়। কি করবে তা ভেবে পায়না।
কঙ্কালটি রোমানের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কি ভয়ঙ্কর এবং বিভৎস তার চেহারা। মুখে বাঁকা হাসি। কঙ্কালটি একভাবে লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ঙ্কর চেহারার কঙ্কালটিকে দেখে রোমান দৌড়ে সেখান থেকে সামনে এগিয়ে যায়। কিন্তু একি? কঙ্কালটি তার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে বিশ্রীভাবে হাসছে। ভয়ে রোমানের গা শির শির করে উঠে। এক অজানা আতঙ্কে তার শরীর কেঁপে উঠে। শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ঠা বয়ে যায়। চলার শক্তিটুকুও সে হারিয়ে ফেলে। টেনশনে শরীর ঘামতে থাকে।
রোমান মনে মনে ভাবে, কঙ্কালটি আজ তার ক্ষতি করবে। কিছুতেই তার পিছ ছাড়ছেনা। গলায় হাত দিয়ে দেখে তাবিজটা নেই। খুলে পড়ে গেছে। এটা দেখে রোমান হতাশ হয়ে যায়। কোনো উপায় না দেখে সে আয়তুল কুরসি পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনা। টেনশনে সে অনেক আয়াত ভুলে গেছে। কঙ্কালটির হাত থেকে আজ সে কোনোভাবেই বাঁচতে পারবেনা। সে তাকে মেরে ফেলবে। তাই বাঁচার আশা বাদ দিয়ে সে মৃত্যুর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। মৃত্যুর আগে বাবা-মা'র মুখ খানি খুব মনে পড়ে। আহারে! সে আর কোনোদিন তাঁদের মুখ দেখতে পাবেনা। তাকে ছাড়া তাঁরাও বা কিভাবে বাঁচবে?
ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম দিনাজপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দিনাজপুর ও পাবনা জেলা স্কুল, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে সন্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দৈনিক সমকাল, দৈনিক বাংলা, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন, দৈনিক চট্টগ্রাম, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার, শীর্ষ অর্থনীতি সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কলাম, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, ছড়া, ফিচার ইত্যাদি লিখে থাকেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি পারিবারিক পত্রিকা মাসিক ফুলকুঁড়ির নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২৩ টি সাহিত্য সংগঠনের সাথে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন, চুয়াডাঙ্গার শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যান সমিতির।আজীবন সদস্য। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭০ টি। তিনি শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পুরস্কার,মাদার তেরেসা, ইউনেস্কো,পদক সহ এ পর্যন্ত ৭৫ টি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যান সমিতির পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। পুলিশে হিসেবে চাকুরি করাকালীন তিনি রাষ্ট্রপতি ও জাতিসংঘ পদক প্রাপ্ত হন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনের জন্য নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলা পরিষদ কর্তৃক তাঁকে স্বর্ণপদক এবং র্যাবে চাকুরি করাকালীন সেরা কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে আইজিপি পদক প্রদান করা হয়।