যোগাযোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই ভুল ধারণা যে, আমরা মনে করি কথা হয়েছে অথচ আদৌ হয়নি। জর্জ বার্নার্ড শ এর এই কথাটি খুব গভীর। কারণ, অনেক সময় আমরা মনে করি আমরা একজনকে আমাদের কথা বোঝাতে পেরেছি, কিন্তু বাস্তবে সেই বোঝাপড়ার মাঝেই গড়বড় থেকে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কী? এই প্রশ্ন যখন কেউ প্রথম শোনে, তখন তার মনে হতে পারে, এটি হয়তো রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা সম্রাটদের মধ্যে অনুষ্ঠিত কোন বড় আলোচনা। তারা হয়তো বিশাল টেবিলে বসে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তর্ক করছেন। যদিও এ কথাগুলোর মধ্যে কিছুটা সত্যতা রয়েছে, তবুও এখানে আমরা যে ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা’র কথা বলছি, তা আমাদের প্রত্যেকের জীবনের অংশ। এটি এমন আলোচনা, যা প্রতিদিন আমাদের জীবনে ঘটে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ গঠনে প্রভাব ফেলে।
একটি সাধারণ আলোচনা কখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, সেটা বোঝার জন্য আমাদের কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে হয়। ধরুন, আপনি বসের সঙ্গে প্রোমোশন নিয়ে কথা বলছেন। বস মনে করেন আপনি এখনও প্রস্তুত নন, কিন্তু আপনি মনে করেন আপনি যোগ্য। এখানে মতবিরোধ রয়েছে। আবার, ধরুন আপনি অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে বসে নতুন মার্কেটিং কৌশল নিয়ে আলোচনা করছেন। যদি আপনি ভুল সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কোম্পানি সমস্যায় পড়বে। অর্থাৎ, এখানে অনেক কিছু নির্ভর করছে এই আলোচনার উপর। আবার এমনও হতে পারে, আপনি স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে একটি সাধারণ বিষয়ে কথা বলছিলেন, আর হঠাৎ করে আগের দিনের একটি পার্টির ঘটনা নিয়ে ঝগড়া শুরু হলো—সেখানে আপনাকে ভুল বোঝানো হলো, আর আপনি হতভম্ব হয়ে গেলেন। তখন আবেগ খুব তীব্র হয়ে ওঠে।
এই ধরনের কথোপকথনের মাঝে যদি আপনি আবেগ সামলাতে না পারেন, বা সময় মতো ঠিকভাবে কথা না বলেন, তাহলে সমস্যা আরও বাড়ে। কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে রান্নার গন্ধ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কথাবার্তা ঝগড়ায় রূপ নিলো, এবং সেটা একসময় চিৎকারে গড়ালো। এতে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এই আলোচনাগুলোকে শুধু বিরক্তিকর, ভয়ঙ্কর বা রাগান্বিত ভাবলেই চলবে না। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই ধরনের কথোপকথনের ফলাফল জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে—ভালো অথবা খারাপভাবে। আপনি প্রোমোশন পাবেন কি না, আপনি আপনার পরিবারে শান্তি বজায় রাখতে পারবেন কি না, এমনকি আপনি প্রতিবেশীর সঙ্গে স্বাভাবিক থাকতে পারবেন কি না—এসবের ওপর নির্ভর করে এই আলোচনাগুলোর ফল।