বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী খণ্ড ১৩তে সংকলিত গ্রন্থগুলি হলো একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙলাদেশে কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক ভূমিকা (এপ্রিল ১৯৯৬); জনগণের হাতে ক্ষমতা – নির্বাচন না অভ্যুত্থান? (জুন ১৯৯৬); বাঙলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭) এবং বিবিধ প্রসঙ্গ (জানুয়ারি ১৯৯৮)।
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙলাদেশে কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক ভূমিকা (এপ্রিল ১৯৯৬) গ্রন্থটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছয়টি দলিল এবং তার ভূমিকা সংকলিত হয়েছে। পর্যালোচনাটি একটি ভিন্নমাত্রা এখানে যুক্ত করেছে। বিষয়টি শুধু গণতান্ত্রিক ও অন্যান্য ধারার রাজনৈতিক অঙ্গনের আগ্রহের এলাকার মধ্যে সীমিত নয় Ñ এর ঐতিহাসিক দালিলিক গুরুত্বও রয়েছে। ’৭১-এ কমিউনিস্ট ভূমিকার ও বিবেচনার সাথে একমত/দ্বিমত পোষণ করতেও এর গুরুত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উমর লিখেছেন, “সারা বিশ্বে এবং আমাদের দেশেও কমিউনিস্ট আন্দোলন এক গুরুতর সঙ্কটের পর্যায় অতিক্রম করছে। এই সঙ্কটের যেমন কতকগুলি বৈশ্বিক কারণ আছে, তেমনি আছে এর কতকগুলি সুনির্দিষ্ট স্থানীয় বা দেশীয় কারণ। এই কারণগুলি যথাযথভাবে নির্ণয় করে আমরা যদি আমাদের রাজনৈতিক লাইন নির্ধারণ করি ও তা সঠিকভাবে কার্যকর করি তা হলেই আমরা সব রকম সঙ্কট উত্তীর্ণ হয়ে এদেশে কমিউনিস্ট বিপ্লবী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে পারবো।
বর্তমানে যে সঙ্কট সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সেটার কারণ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন অথবা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে আত্যন্তিকভাবে নিহিত নেই। এই সঙ্কট কতকগুলি সুনির্দিষ্ট কারণে, এক বিশেষ ঐতিহাসিক পর্যায়ে, উপস্থিত হয়েছে এবং এর চরিত্র সাময়িক। এ বিষয়ে আমরা অন্যত্র অনেক আলোচনা করেছি এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে। এই বিশ্লেষণ, আলোচনা, পর্যালোচনার ক্ষেত্রে এ বইটিতে অন্তর্ভুক্ত দলিলগুলি কিছুটা সহায়ক হবে বলেই আশা করি।” (বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী খণ্ড ১৩, পৃ. ১৫)
জনগণের হাতে ক্ষমতা – নির্বাচন না অভ্যুত্থান? (জুন ১৯৯৬) গ্রন্থে গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও পর্ব এবং জনগণের হাতে ক্ষমতা আনার প্রাসঙ্গিক ধারণাগুলি বিবেচনা করা হয়েছে Ñ ‘আমরা চাই জনগণের হাতে ক্ষমতা। জনগণের হাতে এই ক্ষমতা ছাড়া জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব কিভাবে সম্ভব? কিভাবে সম্ভব জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শক্তিকে সংগঠিত করা? এই রাষ্ট্রের শক্তি তো কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে, নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে আসতে পারে না। এটা সকলেই স্বীকার করেন। কিন্তু তা হলে এই শক্তি আসবে কিভাবে? অর্জিত হবে কিভাবে? কিভাবে গঠিত হবে এমন সরকারি শক্তি যা বিদ্যমান আইনকানুন ফেলে দিয়ে নোতুন আইন এমনভাবে প্রণয়ন করবে যা নৈর্ব্যক্তিক জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চিন্তা, লক্ষ্য এবং আদর্শকে বাস্তবে রূপ প্রদান করতে পারে?
এখানেই কৃষক শ্রমিকসহ সকল শ্রমজীবী জনগণের শ্রেণী সংগ্রামের এক শীর্ষ পর্যায়ে অভ্যুত্থান, এই অভ্যুত্থানে বিপ্লবী শক্তির নেতৃত্ব এবং সেই নেতৃত্বের দ্বারা গঠিত অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা।’ (বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী খণ্ড ১৩, পৃ. ১৯৫)
বাঙলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭) গ্রন্থে জাতীয় ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য, তার বিপরীত ধারা, সংঘাত ও প্রয়োজনীয় বিষয় আলোচিত হয়েছে। সমাজের বুর্জোয়া বিকাশ ও সমাজতান্ত্রিক বিকাশের পারস্পরিক সম্পর্কও আলোচিত হয়েছে। শিল্প বিপ্লব থেকে বুর্জোয়া ও শ্রমিক এই দুই ঐতিহাসিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছে। বুর্জোয়া সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কচ্ছেদের মাধ্যমে ‘সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতি পরিণত হয় জনগণের
সংস্কৃতিতে।’ (বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী খণ্ড ১৩, পৃ. ২০২)
বিবিধ প্রসঙ্গ (জানুয়ারি ১৯৯৮) গ্রন্থটিতে বুর্জোয়া সংস্কৃতির সংকটের বিবরণ রয়েছে। পাঠাগার, ভাষা, বিদ্যা, রাজনীতি, ফতোয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সংস্কৃতির বিবিধ প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক ভূমিকা আলোচিত হয়েছে।
- আফজালুল বাসার