তানজিনা ইসলাম। তরুণ কবি। আবহমান বাংলার নদী, প্রকৃতি আর মানুষের সারল্য যাপিত জীবনাচার— তাঁকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে, উদ্বেলিত করে। তাঁর কবিতায় প্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, নিসর্গ যেমন উঠে এসেছে, তেমনি অতিমারী করোনাকালের দুর্বিষহ যাতনার এক চিত্রকল্পময়তা বাস্তবের মিশেলে উদ্ভাসিত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অতিমারী করোনাকালে মানুষের জীবনের হাহাকার আর বেঁচে থাকবার যে আকুতি তা এ কবিতাগ্রন্থের পরতে পরতে উপলব্ধি করা যাবে।
মা পাখিটা কেবলই ছটফট করে;/ছানাদের জন্য পরাণ তার/সদাই কেমন করে।/ছানাদের মুখ, নীড়ের মায়াঘেরা সুখ/তাকে স্মৃতিকাতর করে।/ ফিরতে সে পারবে তো?/এ বন্দিত্ব তার ঘুচবে তো!... ছানাগুলো মায়ের অপেক্ষায় আছে,/মা পাখিটা ফেরার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে।
এই যে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে দোল খাওয়া জীবন— পেণ্ডুলামের মতো আমাদের যাপিত জীবনকে আলুলায়িত করেছে। সেই বিভীষিকাময় করোনাকাল এখনো আমাদের তাড়া করে ফেরে।
তরুণ কবি হলেও তানজিনা ইসলামের কবিতায় এক ধরনের দ্যোতনা রয়েছে— যা পাঠককে ভাবায়, আন্দোলিত করে। এছাড়া তাঁর কবিতায় জীবনানন্দীয় সুরের মূর্ছনা অনুরণিত হতে দেখা যায়— “দিগন্তের নীলিমায় হেমন্তের নরম রোদ যেখানে সোনা ছড়ায়,/হাজার, লক্ষ শালিখের ঝাঁক যেখানে নীড় খুঁজে পায়।”...মাছরাঙা রঙিন পাখা মেলতেই—/প্রকৃতি ভুলে যায় তার মলিনতা।/বকের সারি ফেরার পথ ধরতেই—/ দিয়ে যায় সন্ধ্যে নামার বারতা।
এমনিভাবে অসংখ্য চরণ তাঁর এই কবিতাগ্রন্থে নানা মাত্রিক বোধের মিশ্রণে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে।
কবিতাগুলো কিঞ্চিৎ হলেও আনন্দের বারতা দেবে; পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে— এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।