আমার বইয়ের শিরোনাম 'ইসলাম, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি' দেখে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, এতগুলো বিষয় একটা বইয়ের মধ্যে কি করে আটানো যায়। ভাবনাটা খুবই স্বাভাবিক। পাঠকরা এযাবৎ ইসলাম সম্পর্কে, বিজ্ঞান সম্পর্কে, এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে আলাদা আলাদাভাবে অনেক বই পড়েছেন ও উপভোগও করেছেন। তাঁরা ইসলাম ও বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি, এবং ইসলাম ও সংস্কৃতি বিষয়েও বই পড়েছেন। কিন্তু ইসলাম, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি এই তিনটি বিষয় এক সূতোয় গাঁথা খুব একটা দেখা যায়না। আমি যে ইচ্ছে করে গেঁথেছি তাও বলতে পারব না। আসলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার প্রবণতা আমার ছোটবেলা থেকে। পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশুনা ও গবেষণা করার পর বুঝতে পারলাম, আমরা যাকে সংস্কৃতি বলে থাকি, তা জীবনের একটি খণ্ডিত রূপ নয়, বরং জীবনের সব কিছুকেই ঘিরে রয়েছে তা। ধর্মের কথা বললেই অনেকের মনে পারলৌকিক জগতের কথাই ভেসে ওঠে। অথচ ধর্ম তো এই পৃথিবীতে সুন্দরভাবে, পূর্ণভাবে বাস করারই জীবন বিধান। টি এস ইলিয়টের ভাষায়, 'ধর্ম সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ'। 'ওদিকে বিজ্ঞানে অসাধারণ অগ্রগতি শাধিত হবার পর এবং আধুনিক জীবনের বহু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকার পর বিজ্ঞানও এখন মানুষের সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে গিয়েছে। আমার বইটিতে তিনটি বিষয়ের কয়েকটি সমসাময়িক দিকের প্রতি আলোকপাত করেছি মাত্র। কোন বিষয়ের আলোচনা যে Exhaustive হয়েছে তা নয়। বিষয়গুলোর মধ্যে যে যোগাযোগ বিদ্যমান, তা তুলে ধরা-ই আমার উদ্দেশ্য। আমার কিছু বন্ধু আমাকে প্রায়ই বলেন, 'তুমি পদার্থবিজ্ঞানের গবেষক, কিন্তু তুমি বিজ্ঞান ছাড়াও সাহিত্য, সঙ্গীত, ধর্ম বিষয়ে এত চিন্তা কর কেমন করে?' আমি উত্তরে বলি, এগুলোকে আমি অখণ্ডরূপে দেখতে শিখেছি। পাঠকরা অনেক সময় একজন লেখকের অনেক খন্ডিত চিত্র দেখতে পান। এগুলোকে এক জায়গায় করলে খন্ডে খন্ডে একটা অখন্ডকে পাওয়া যেতে পারে। ঠিক তেমনি এই বইয়ের লেখাগুলোকে একত্রিত করলে এদেরকে একই মালায় গাঁথা যায় বা এরা যে একই মালার বিভিন্ন ফুল, তা পরিস্ফুট হয়ে উঠবে। লেখাগুলো পড়ে পাঠকের ভালো লাগলেই কেবল লেখকের খণ্ডে খণ্ডে অখণ্ড নির্মাণের প্রয়াস সার্থক হবে। এম. শমশের আলী
বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম শমশের আলী ১৯৬১ সালে ঢাকায় আনবিক শক্তি কমিশনে সায়েন্টিফিক অফিসার পদে যােগ দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি এ প্রতিষ্ঠানের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এর পাশাপাশি অসামান্য একাডেমিক ক্যারিয়ারের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালে তাকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অনারারি প্রফেসর-এর বিরল সম্মানে ভূষিত করে। পরবর্তীতে ১৯৮২ থেকে দু-যুগ তিনি এ বিভাগের নিয়মিত অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তার একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। বিজ্ঞানের জগতে খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব প্রফেসর শমশের আলী বিশ্বের তিনটি সায়েন্স একাডেমির ফেলাে-ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স, একাডেমি অব সায়েন্স অব দি ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স (প্রেসিডেন্ট : ২০০৪-২০১২)। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলাে। বিজ্ঞানভাবনা প্রসারে সদা-উৎসাহী ড. আলী টানা এক যুগ বিটিভি-তে বিজ্ঞান বিচিত্রা ও নতুন দিগন্ত নামে দুটি নতুন ধারার শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ে সিরিজ লেকচার প্রদান করেন বিবিসি-তে। বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তােলার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স ও ইতালির থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ক অব সায়েন্টিফিক অর্গানাইজেশনের সম্মাননা। | বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি ভূষিত হয়েছেন বহু গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা ও পুরস্কারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হরিপ্রসন্ন রায় স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স স্বর্ণপদক, জগদীশ চন্দ্র বসু স্বর্ণপদক এর অন্যতম। দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রথমসারির সায়েন্টিফিক জার্নালগুলােতে প্রকাশিত হয়েছে তার অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা। এছাড়াও বিজ্ঞান, গণিত ও ইসলাম নিয়ে লিখেছেন বেশ কয়েকটি আলােচিত গ্রন্থ। আল্লামা শমশের আলী এমন একজন মানুষ-চেনা ছকের বাইরে এসে যিনি দেখতে শিখেছেন মানুষ ও প্রকৃতিকে। বন্ধু ও কাছের মানুষেরা তাকে অভিহিত করেন A man with a large antenna বলে। বিজ্ঞানের পাশাপাশি কবিতা, সংগীত, সাহিত্য ও ধর্ম তার বিশেষ আগ্রহের বিষয়।