মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম
সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নরসিংহপাড়া গ্রামের মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম ১৯৫৮ সালে ৭ জুন পিতার চাকরিসূত্রে করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক, রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার রওশন আলী ও মাতা আলহাজ জাহানারা বেগম। প্রিন্টিং-এ ডিগ্রি নিয়ে প্রথমে বিজ্ঞাপনী সংস্থা, পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (সাবেক ঢাকা জাদুঘর)-এ ফটোগ্রাফি শাখায় যোগদান করেন। চাকরিকালীন সময়ে স্বেচ্ছায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রস্তুতি সময়ে কাজ করেন। তিনি ফটোগ্রাফিতে আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রদর্শনীতে নিয়মিত অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ১৪টি পুরস্কারও পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, জাপানে অনুষ্ঠিত বিখ্যাত আন্তর্জাতিক নিকন আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ’৮৭/’৮৮ তে সম্মান-সূচক ব্রোঞ্জ মেডেল লাভ করেন। এছাড়া নিউজ ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক ‘এখনই সময়’ পত্রিকায় জাহাঙ্গীর আখন্দ নামে ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ফটো সাংবাদিকতা করেছেন। তার নিজের তোলা আলোকচিত্র ও কবিতা সমন্বয়ে ‘ছবি কথা কয়’ নামে গ্রন্থটি ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয়।
তাঁরই উদ্যোগে নেপথ্যে থেকে ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম চাকরির তথ্য সমৃদ্ধ পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘বাংলা বিজ্ঞাপন’ প্রকাশিত হয়।
মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৩ সালে গঠিত বিজয়স্তম্ভ ’৭১ বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব থাকাকালীন সমমনা সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ স্থানটিতে প্রতীকী ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ স্থাপন ও কয়েক বছর ঝুঁকির মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন।
পরবর্তীতে সরকার সোনার বাংলা সাংস্কৃতিক বলয় কার্যক্রমে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নির্মাণ শুরু করলে বিজয় স্তম্ভ ’৭১ বাস্তবায়ন পরিষদের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ’১৯৯৬ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহযোগী সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক কমান্ড থেকে প্রকাশিত ‘অরণি’ এবং আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ১৯৯৮তে বয়স্ক ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের ‘প্রবীণ’ সম্পাদনা করেন।
১৯৯৫ সালে বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম জাদুঘর বিষয়ক সাহিত্য প্রকাশনা ‘ঐতিহ্য’ এবং ১৯৯৭ সালে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক ‘জাদুঘর পরিক্রমা’র সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ জাদুঘর পরিষদ ও জাদুঘরের কয়েকজন সহকর্মীর উদ্যোগে ২০০০ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের জাদুঘর’ গ্রন্থের তথ্য সংগ্রহ ও গ্রন্থনাকারীদের অন্যতম তিনি।
তিনি ও কয়েকজন অফিসারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাদুঘর অফিসার সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ জেলা সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদে কয়েক মেয়াদে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ জাদুঘর পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ঢাকাস্থ পাবনা জেলা স্কুল এক্স স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সদস্য, সেগুনবাগিচা সোসাইটির উপদেষ্টা, প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সদস্য। এছাড়া তিনি চলনবিল গুণীজন সংগ্রহশালা, আখন্দবাড়ি গ্রামীণ সংগ্রহশালা, ব্যারিস্টার রওশন-জাহান স্মৃতি পাঠাগার এবং রওশন-জাহান হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা।
মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম চোখের রেটিনা সংক্রান্ত জটিল রোগের কারণে ২০০০ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে সাপ্তাহিক ‘বাংলা বিজ্ঞাপন’ পত্রিকায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি মাসিক ‘ঐতিহ্য’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং সুপরিচিত প্রকাশনা সংস্থা ‘জ্যোতিপ্রকাশ’-এর স্বত্বাধিকারী। এছাড়াও তিনি ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সাবেক অর্থ-সম্পাদক, ইন্দো-বাংলা সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের সভাপতি এবং নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক।
মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলমের উদ্যোগে বিশ্বে প্রথম ও একমাত্র নামের সংগঠন ‘জাহাঙ্গীর সার্কেল’ ১২-১২-১২তে গঠিত হয়। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তারই একক প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনায় গণঅর্থায়নে ছাপ্পান্ন লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিজ গ্রামে চলনবিল জনপদে দেশে প্রথম ও একমাত্র ‘দ্বিতল ঈদগাহ মাঠ’ নির্মিত হয়েছে। এখানে ২৫০০-এর অধিক মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে।