মুনমুন আজাদ

মুনমুন আজাদ পৈত্রিক বাড়ি বরিশাল হলেও জন্ম ঢাকায়। বাবার চাকুরি সূত্রে বেড়ে ওঠা পাহাড় ও নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে। সেইসঙ্গে পড়াশোনার শুরুটা মিশনারী স্কুলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর, পেশায় একজন শিক্ষক। সাংস্কৃতিক অঙ্গণের নানান বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েও কোনোকিছুই আঁকড়ে ধরা হয়নি তাঁর। শেষপর্যন্ত লেখালেখিটাই টিকে আছে। নিজের মনের এলোমেলো কথাগুলো লিখে নিজেকে কবি ভাবাটা সম্ভবত ধৃষ্টতা হলেও মূলত তিনি একজন অপেশাদার কবি। কিছুটা অন্তর্মুখী স্বভাবের হলেও নিজেকে নান্দনিকতা ও সুন্দরের মাঝে উপস্থাপন করতেই তাঁর নিরন্তর ভালোবাসা। বই সারাংশ পূর্বকথার পূর্বকথা বলছি। আমি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলা এক প্রেমিক। যে কি না মেঘের ভেতর ছবি খোঁজে, বৃষ্টির শব্দে কান পেতে গান শোনে আর হারিয়ে যায় প্রকৃতি ও মানুষের প্রেমে। মানুষ আর প্রকৃতির মাঝে আমি এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পাই। আকাশ নীল, কিন্তু আকাশের অনেক রং। কখনো লাল, কখনো কমলা, হলুদ, ধূসর আরও কত রঙ। নদীরও তেমনি কত রূপ, কখনও শান্ত কখনও অশান্ত। নদীর একূল ভাঙে আবার ওকূল গড়ে। প্রতিটা ঋতুতে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। মানুষও ঠিক তেমনি। ঋতু বদলের মতো মানুষের পছন্দ ও ভালো লাগাও বদলায়। আমার মনে হয়, নিজেকে একটু চেনা বা জানার জন্যে প্রত্যেক মানুষেরই একখানা আত্মপ্রতিকৃতি তৈরি করা উচিত। সেটা ইজেলের ক্যানভাসে হোক বা মনের ক্যানভাসে। স্বপ্ন দেখার বয়সে আমি স্বপ্ন হারিয়েছি অনেক। শুধু 'আছি' নামের একটু আশ্বাসের প্রগাঢ়তায় এখনও খুঁজে ফিরি জীবনের সংজ্ঞা। আসলে জীবনে পূর্ণতা বলে কিছুই নেই। পূর্ণ শব্দটা নিজেই সব সময় অপূর্ণ, শূন্য। জীবনে এত সংকট, এত বিস্ময়, এত অপ্রাপ্তি-এগুলোর যোগফল কষতে কষতে খাতা ফুরিয়ে যায় জীবনের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো অভিমান। কিন্তু প্রচণ্ড ক্লান্ত আমি জীবনের প্রতি, মানুষের প্রতি। জীবনযুদ্ধের যোদ্ধাও ক্লান্ত হয় কখনো কখনো, তার জীবনও একটুখানি বিশ্রাম চায়। কিন্তু জীবন তাকে সেটুকু দিতেও রাজি নয়। তবে এটুকু বুঝেছি, আমরা যেটা দেখাই সেটা আসলে জীবন নয়। আমরা যেটা যাপন করি সেটাই জীবন। এতটুকুতেই থামছি, আরও বিশদভাবে লিখতে গেলে পাঠক হয়তো বইয়ের পাতা উল্টানোই ভুলতে বসবেন। আমি পড়তে শেখার পর পারিবারিক সংগ্রহ থেকে হাতে পাই 'ঠাকুরমার ঝুলি।' সেটা দেখেই ছবি আঁকতাম আর দু-চারটে শব্দে লিখতাম ছড়া। তখন আমার একনিষ্ঠ পাঠক ও উৎসাহদাতা ছিলেন বাবা। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ অবধি লেখালেখিটা চলছিল। তারপর অনেক দিনের নীরবতা। শিক্ষকতা করতে এসে আমার পরম প্রিয়জন, শুভাকাঙ্ক্ষী অধ্যক্ষ মিসেস নাজমা বেগম আমার ভেতরের সেই সুপ্তবীজকে আবারও জাগিয়ে তোলেন। এখনো তাঁর উদ্দীপনা আমাকে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। এরপর এল সবচেয়ে দুঃসাহসিক কাজের পালা অর্থাৎ লেখাগুলো বইয়ের পাতায় ছাপিয়ে তোলা। যা আমি কখনোই ভাবিনি। এ কাজের জন্য প্রতিনিয়ত আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছেন আমার বন্ধু ও জীবনসঙ্গী কে জি এম আজাদ। নিঃস্বার্থ এই জীবনসঙ্গীর জন্য আমাকে একের পর এক খুঁজে বের করতে হয়েছে লেখাগুলো। তবে আমি সন্ধিহান এই লেখাগুলো কোনো কবিতা বা লেখার মানদণ্ডে দাঁড়াবে কি না? সে বিচারের ভারটুকু না হয় পাঠকেরই থাকুক। মুনমুন আজাদ