ওয়াহিদ নাগর

ওয়াহিদ নাগর: জলজ অভিজ্ঞতার কবি ও আশির দশকের বিপ্লবী কণ্ঠ ওয়াহিদ নাগর একজন স্বতন্ত্র ও বহুমাত্রিক সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব, যিনি আশির দশকে তুখোড় ছাত্রনেতা ও তরুণ বিপ্লবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সাহসী বক্তব্য, মানবিক চিন্তা ও কবিতার প্রতিশ্রুতিশীল কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল, শামসুর রহমান, নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ ও মহাদেব সাহার মতো বিশিষ্টজনদের স্নেহভাজন ও সহযোদ্ধা। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, ছড়াকার, আবৃত্তিকার ও নিবন্ধকার। তার কবিতা শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকেনি—রেডিও-টেলিভিশনের পর্দা পেরিয়ে পৌঁছেছে জনতার মিছিলে, পথনাটকে, শোভাযাত্রায়। সমাজ ও সময়কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে রচিত তার কবিতা জীবন, প্রেম, বিপ্লব ও বিশ্বাসের জলের মতো প্রবহমান ভাষ্য। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তার কবিতার হাতেখড়ি হয়। শিশুকাল থেকেই দেশভ্রমণের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ এবং জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজে চাকরি। ফলে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া—এই ছয় মহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশই তিনি ভ্রমণ করেন। বিশ্বভ্রমণ তাঁকে দিয়েছে অভিজ্ঞতা, বিশ্ববীক্ষা এবং কবিতার এক অভিনব বর্ণমালা। তার এই ভ্রমণজীবন ও আত্মজ উপলব্ধির মিশেলে রচিত কাব্যগ্রন্থ "সপ্তবর্ণ" —যা একটি ডায়রির মতো, যেখানে আশির দশকের ছাত্র-আন্দোলন, প্রেম, দেশপ্রেম, ধর্মভাবনা, বিদ্রোহ, রম্যতা ও ব্যক্তিগত অনুশোচনার পরিপ্রেক্ষিত উঠে এসেছে সাতটি বিষয়ভিত্তিক অধ্যায়ে। কবিতার শৈলীতে তিনি নিরীক্ষাধর্মী হলেও ভাষা ব্যবহার করেছেন সরল, সুনির্মিত ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন। তার কবিতাগুলো যেন অচিন অনুভূতির সঞ্চয়পত্র—যেখানে হৃদয়ের নিঃশব্দ অনুরণন ও সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা এক সাহসী আত্মার দীর্ঘশ্বাস মিলেমিশে একাকার। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার বেতাল গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ওয়াহিদ নাগরের পিতা ছিলেন মরহুম আকমাল হোসেন মিয়া এবং মাতা ফয়জরা খাতুন। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ এবং দুই কন্যাসন্তানের জনক। সমুদ্রের মাছেরও সীমা আছে, কিন্তু ওয়াহিদ নাগর নিজেকে গড়ে তুলেছেন এক ‘সীমাহীন জলযাত্রী’ হিসেবে। কবিতা তার জন্য শুধু শিল্প নয়, আত্মার মুক্তিযাত্রা—এক অভ্যন্তরীণ বিপ্লব, যা ব্যক্তিকে সময়ের অনুবাদকে ধারণ করতে শেখায়। আজও তিনি লেখালেখি করে চলেছেন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়, আর তার কবিতা সমানতালে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের হৃদয়ে ও প্রতিরোধের মঞ্চে। ওয়াহিদ নাগর কেবল কবি নন, তিনি একজন যাত্রাপথের মানুষ, যিনি জল, আকাশ, স্বদেশ ও প্রেম—সবকিছুকে মিলিয়ে কবিতা রচনা করেন।