নাফিস যেদিন তাকে প্রোপোজ করেছিলো সেদিন তার চোখে-মুখে দারুণ সুন্দর আশ্চর্য এক নরম-কোমল আলোর দীপ্তি ছিলো, যা এর আগে কখনও তুলি দেখেনি। কী আশ্চর্য সেই প্রেমময় মুখ, কী আবেগময় সে অবয়ব, কী বিপুল আকুতি সেই চোখে, তুলি সে মুখের আশ্চর্য কোমলতায়, সেই সুগভীর কালো চোখের চাহনি থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না। নাফিসকে সে কখনও এই রূপে ভাবেনি। কখনও তাকে এভাবে দেখেনি। সে এক আশ্চর্য মোহময় প্রেমময় মুখ। যে রূপ এজীবনে তুলি কারো মুখে খুঁজে পায়নি। আচ্ছা প্রেমিক-পুরুষের মুখ বুঝি এমনই হয়? সব সময় রাগী মুখের শক্ত চেহারার মানুষের মুখের ওপরও রেখাগুলো কোমল আর নরম হয়ে সারা চোখে-মুখে কোমলতার প্রলেপ ছড়িয়ে দেয়! চোখের মায়ায় হৃদয় তরল করে দেয়।
সেই মুখখানি মনে পড়লেই তুলির বুক কেমন যেন দুরুদুরু ভয়ে কাঁপতে থাকে। এক আশ্চর্য ভালোলাগায় তার দেহ-মন অবশ হয়ে আসে। মনে মনে তুলি ভাবেÑ নাফিস, তুমি আমায় এ কী বললে? একি নিষ্ঠুর খেলা তুমি আমায় নিয়ে শুরু করলে। আমি তো এ চাইনি। তবে কেন আমার পাথরের মতো শক্ত এ হৃদয়ে প্রেমের শীতল হিম করে দেওয়া বাতাসে কাঁপন ধরিয়ে দিলে? তুলির সেদিনের কথা একে একে আবার ভাবতে বসলো। সেদিনের কথা ভাবতেও তার খুব ভালো লাগে। বারবার সে সেদিনের প্রতিটি ক্ষণের স্মৃতি মনে করে দারুণ এক প্রেমময় সুখের সাগরে ভাসতে লাগলো। আহা কী মধুর ছিলো সে সাক্ষাৎ! কী যেন ছিলো সেদিন নাফিসের চোখে-মুখে। তুলি বুঝতে পারে না।
তবে সেটা যে একেবারে অন্যরকম একটা কিছু তা তুলি বোঝে। কী শান্ত, কোমল আর কমনীয় দেখাচ্ছিলো সেদিন নাফিসের মুখখানি! কী মায়াময়! তুলির গত পাঁচ-ছয় রাত শুধু সে মুখটাকেই মনে পড়েছে। মনে মনে সে মুখটাকে ভেবেই বহুক্ষণ নির্ঘুম কাটিয়েছে। তারপর এক সময় কখন ঘুমিয়ে গেছে সে জানে না। ঘুমের ঘোরেও সেই কোমল-সুন্দর প্রেমময় মুখখানি তার পিছু ছাড়ে না। আচ্ছা ছেলেদের প্রেমে পড়া চেহারা বুঝি এমনই হয়? এমনই মায়াময় আর প্রেমময়?
কামরুন নাহার। জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ সালে ঢাকায়। বেড়ে ওঠা ও পড়াশুনা ঢাকায়। তার গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলার অর্জুন্দী গ্রামে। শৈশব কেটেছে বগুড়া এবং গাজীপুর সেনানিবাসে। বাবা মরহুম মোঃ জহিরুল ইসলাম সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ‘ডেপুটি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ পদে কর্মরত ছিলেন। মা তাহেরা বেগম একজন আদর্শ হোমমেকার। দুই বোন তারা। তার বড় বোন নূরুন নাহার বর্তমানে সরকারের উপসচিব পদে কর্মরত আছেন। লেখিকার স্বামী মোহাম্মদ জিয়াউল হক বর্তমানে সরকারের যুগ্মসচিব পদে কর্মরত আছেন। তার এক সন্তান। নাম জারিফ। তিনি রসায়ন বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। পেশাগত জীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে। এরপর কেমিস্ট হিসাবে কিছুদিন একটি ঔষধ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন। ২০০৬ সালে বিসিএসআইআর -এ রিসার্চফেলো হিসাবে যোগদান করেন। তিন বছরের কিছু বেশি সময় সেখানে কর্মরত ছিলেন। এসময় ড. মু. কুদরাত-এ-খুদা প্রবর্তিত ‘বিজ্ঞানের জয়যাত্রা’ পত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখি করেন। ২০২১ সনের বইমেলায় তার প্রথম বই ক্যানসার জয়ের গল্প ” বাঁচার কী যে আনন্দ ” প্রকাশিত হয় এবং আত্মজৈবনিক শাখায় “ত্রৈমাসিক সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার-২০২৩” অর্জন করে। ২০২৩ সালের ২১শে বইমেলায় তার দ্বিতীয় উপন্যাস “প্রেমপত্র” প্রকাশিত হয় চলন্তিকা পান্ডুলিপি পুরস্কার ২০২২ এ রম্য শাখায় বিজয়ী হয়ে। ২০২৪ সালের জুনে তার তৃতীয় উপন্যাস “শব্দহীন” প্রকাশিত হয়।। ২০২৫ এ প্রকাশিত হয় চতুর্থ উপন্যাস ‘বাঁচার কী যে আনন্দ”।