সদালাপী, সুদর্শন, হাসিখুশি ডাক্তার আমাকে খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, গল্পচ্ছলে জানিয়ে গেলেন, ‘আই অ্যাম অ্যা পেশেন্ট অব একিউট প্রো-মাইলোসাইটিক লিউকেমিয়া!’ সহজ-সরল ভাষায় যাকে বলে ব্লাড ক্যানসার!
আমার কী ভীত হওয়া উচিত? নাকি আতঙ্কিত হওয়া উচিত? আমি কি বিষন্ন হব? নাকি বেদনার্ত হব? আমার এই মুহুর্তে ঠিক কেমন লাগা উচিত? কী আশ্চর্য! আমার কিছুই মনে হচ্ছে না। বরং একরাশ নির্লিপ্ততা যেন আমাকে ঘিরে ফেলল। সেই সময় আমি চলৎশক্তিহীন হয়ে সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল মানুষ। মনে মনে ভাবার শক্তিও যে মানুষ কখনো কখনো হারায় কে জানত!
আমি যদি মারা যাই, তাতে এই পৃথিবীর তেমন কিছুই এসে যাবে না। আমি পুরো ব্যাপারটা হিসাব করতে চাইলাম। যেমন : আমার বরের বয়স কম, আমার মৃত্যুর পর সে কিছু দিন মন খারাপ করে ঘুরবে, তারপর আরেকটা বিয়ে করবে, সোজা-সাপটা হিসাব। আমার মায়ের আরেকজন কন্যা আছে। দুজন ছিল, একজন থাকবে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কয়েকদিন কাঁদবে। তারপর ভুলেও যাবে, যে যার মতো কাজে মন দেবে। কখনো আমার কথা মনে হলে হয়তো ভাববে, আহা মেয়েটা এত অল্প আয়ু নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল, মরে গেল! আমার মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত হবে যে,সে হলো আমার ছেলে জারিফ। ওর বয়স যে মাত্র বিশ মাস। মানে এক বছর আট মাস। ও তো এখনও এই পৃথিবীর কিছুই বোঝে না। ও তো জানবেই না ওর জন্য মা কতো কষ্ট করেছে এক সময়। কত ভালোবাসার ধন ছিল সে তার মায়ের। এমনকি ও যখন বড় হবে, ওর মায়ের কোন স্মৃতি ওর মনে থাকবে না।
আমার ঘুম আসে না একদমই। দিনের পর দিন না ঘুম আসা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা অন্যরা ভাবতেও পারবে না। মনে হতো আমার সাথে মৃত্যুর দূরত্ব কেবল একটা পাতলা নাইলন সুতোর। সুতোটার উপর আমি দাঁড়িয়ে আছি। হাঁটতে গেলেই সোজা মৃত্যু কূপ। একটু নড়ব তো সোজা নিচে মৃত্যুদূত অপেক্ষায়।
কামরুন নাহার। জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ সালে ঢাকায়। বেড়ে ওঠা ও পড়াশুনা ঢাকায়। তার গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলার অর্জুন্দী গ্রামে। শৈশব কেটেছে বগুড়া এবং গাজীপুর সেনানিবাসে। বাবা মরহুম মোঃ জহিরুল ইসলাম সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ‘ডেপুটি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ পদে কর্মরত ছিলেন। মা তাহেরা বেগম একজন আদর্শ হোমমেকার। দুই বোন তারা। তার বড় বোন নূরুন নাহার বর্তমানে সরকারের উপসচিব পদে কর্মরত আছেন। লেখিকার স্বামী মোহাম্মদ জিয়াউল হক বর্তমানে সরকারের যুগ্মসচিব পদে কর্মরত আছেন। তার এক সন্তান। নাম জারিফ। তিনি রসায়ন বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। পেশাগত জীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে। এরপর কেমিস্ট হিসাবে কিছুদিন একটি ঔষধ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন। ২০০৬ সালে বিসিএসআইআর -এ রিসার্চফেলো হিসাবে যোগদান করেন। তিন বছরের কিছু বেশি সময় সেখানে কর্মরত ছিলেন। এসময় ড. মু. কুদরাত-এ-খুদা প্রবর্তিত ‘বিজ্ঞানের জয়যাত্রা’ পত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখি করেন। ২০২১ সনের বইমেলায় তার প্রথম বই ক্যানসার জয়ের গল্প ” বাঁচার কী যে আনন্দ ” প্রকাশিত হয় এবং আত্মজৈবনিক শাখায় “ত্রৈমাসিক সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার-২০২৩” অর্জন করে। ২০২৩ সালের ২১শে বইমেলায় তার দ্বিতীয় উপন্যাস “প্রেমপত্র” প্রকাশিত হয় চলন্তিকা পান্ডুলিপি পুরস্কার ২০২২ এ রম্য শাখায় বিজয়ী হয়ে। ২০২৪ সালের জুনে তার তৃতীয় উপন্যাস “শব্দহীন” প্রকাশিত হয়।। ২০২৫ এ প্রকাশিত হয় চতুর্থ উপন্যাস ‘বাঁচার কী যে আনন্দ”।