১৯৯৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ার সময় থেকেই পেশাদার সাংবাদিকতা শুরু। তখনকার ভোরের কাগজ ক্রীড়া সাংবাদিকতায় নিয়ে এসেছিল নতুন মাত্রা। তার অংশীদার হিসেবে তিন বছর কাটানোর পর যোগ দেন নতুন প্রথম আলোয়। তারপর যায়যায়দিন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর পথচলা শুরু করেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। কালের কণ্ঠ খেলার সংবাদ প্রকাশে নিয়ে এসেছিল ভিন্ন ধারা। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো দৈনিক বের করে খেলার চার পৃষ্ঠা। ২০১৪ সালে হন উপ-সম্পাদক, খেলার জগৎ ছেড়ে কাজ শুরু করেন আরও বড় ক্ষেত্রে।
এক যুগ কালের কণ্ঠে কাটিয়ে দেশ রূপান্তরে যোগ দেন নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। কয়েক মাস পর দায়িত্ব নেন সম্পাদকের। খেলাধুলার সাংবাদিক থেকে পত্রিকার সম্পাদক হওয়া বাংলাদেশে বিরল ব্যাপার, তিনি এই ক্ষেত্রে অগ্রসৈনিক। খেলার রিপোর্টিংয়ে সাহিত্যের সংযোগ ঘটানো এবং ধারালো বিশ্লেষণের কারণে তার লেখা ছিল অন্যরকম আকর্ষণের। দেশ-বিদেশের মাঠ থেকে তার লেখা পড়ার জন্য উন্মুখ থাকতেন পাঠকরা। সংগত কারণেই এই ক্ষেত্রে পেশাগত সাফল্যও ছিল। প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার হন যখন, তখন অনার্সের গণ্ডিই পার হননি।
ক্রীড়া সাংবাদিকতার পরিচিতির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই আড়ালে পড়ে যায় তার সাহিত্যিক পরিচয়। অথচ তার অনুরক্ত পাঠকের কাছে সেটাই মূল পরিচিতি। মোস্তফা মামুনের কিশোর উপন্যাস মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে গত দুই দশকের ছোটদের। 'ক্যাডেট নাম্বার ৫৯৫', 'বামহাতি বাবলু', 'বাবাবিরোধী কমিটি', 'ম্যাজিক বয়'-এর মতো বইগুলোর পাশাপাশি লিখেছেন 'তনু কাকা সিরিজ', যা গোয়েন্দাভক্ত কিশোরদের পাঠ্যতালিকায় আছে ওপরের দিকেই। লিখেছেন, 'আনন্দনগর এজপ্রেস', 'ফ্রেন্ডস ক্লাব', 'রিমি আজ চলে যাবে', 'কোটিপতি বদরু ভাই'-এর মতো বড়দের মনোযোগ পাওয়া উপন্যাসও। সব মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। একসময় প্রচুর টিভি নাটকও লিখেছেন, টক শোতেও আছে সরব উপস্থিতি।
বন্ধু-আড্ডা এসব নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ বলে যুক্ত ছিলেন বহু সংগঠনে। নেতৃত্বও দিয়েছেন। দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ওল্ড ক্যাডেটস অ্যাসোসিয়েশন অব সিলেটের।
জন্ম মৌলভীবাজারের চা বাগানঘেরা উপজেলা কুলাউড়ায়। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষে সিলেট ক্যাডেট কলেজের আনন্দময় পরিবেশে কেটেছে শৈশব। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর এইচএসসি পড়েছেন কুমিল্লা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স। কিন্তু আইনজীবী আর হওয়া হয়নি। খেলা আর লেখার নেশায় আইনের জগৎ রয়ে গেছে দূরেই।
স্ত্রী ড. হুমায়রা ফেরদৌস আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। একমাত্র সন্তান ৭ বছর বয়সী ছেলে ফাহমিদ ফেরদৌস মোস্তফা (গৌরব)।
ছোট ভাই মোস্তফা মহসিন পেশায় অ্যাডভোকেট। একমাত্র বোন ফাহমিদা শারমিন সুমি মারা গেছেন ২০০৮ সালে। মা ফয়জুন নাহার বেগম অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান ছিলেন শিক্ষক।
শিমুল সালাহ্উদ্দিন মূলত কবি। তিনি পেশাদার সাংবাদিক, গবেষক, গণমাধ্যম পরামর্শক ও টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেন। কবি শিমুল সালাহউদ্দিনের জন্ম ১৭ অক্টোবর, ১৯৮৭ সালে, ঢাকার উপকণ্ঠে, তুরাগে। পৈতৃক নিবাস গাজীপুরের টংগী থানার মুদাফা গ্রামে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও আবৃত্তি সংগঠন ধ্বনি’র। আবৃত্তি সংগঠন ধ্বনি’র জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন চারটি দলীয় মঞ্চ-প্রযোজনা। যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের নানা গণমাধ্যমে শিল্পসাহিত্য বিষয়ক লেখালেখি ও অডিওভিজ্যুয়াল নির্মাণ করছেন তিনি। এখন কাজ করছেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের হেড অফ ইভেন্টস এন্ড ব্র্যান্ডিং এবং সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে। সংগীত বিষয়ক প্লাটফর্ম ‘গানজানালা’র সাম্মানিক সিইও তিনি। পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন একাধিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আলোচিত গবেষণাকর্ম ‘মুজিবপিডিয়া’র সহকারী সম্পাদক ও উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তার আগে সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন বিজয় টিভিতে, সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন নিউজ বাংলা টোয়েন্টিফোর ডট কম, বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন বার্তা টোয়েন্টিফোরডটকম এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে। যথাক্রমে অনুষ্ঠান বিভাগ ও বার্তা বিভাগে কাজ করেছেন চ্যানেল আই ও দেশ টিভিতেও। অন্তর্জালে সাক্ষাৎকারভিত্তিক আলোচিত আয়োজন ‘InতাঁরView with শিমুল সালাহ্উদ্দিন’ এর পরিকল্পক ও উপস্থাপক তিনি। এছাড়া কবিদের নিয়ে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান ‘কবির কবিতা পাঠ’ এর আয়োজক সংগঠন ’গালুমগিরি সংঘ’র প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। গালুমগিরির প্রোডাকসন্সের আয়োজনে প্রতিবছর বইমেলায় ‘মেলার মাঠে মুখোমুখি’তে তিনি লেখক শিল্পী কবিদের সাক্ষাৎকার নেন। তাঁর প্রকাশিত ৪ টি কাব্যগ্রন্থ: শিরস্ত্রাণগুলি (ঐতিহ্য, ২০১০), সতীনের মোচড় (শুদ্ধস্বর, ২০১২), কথাচুপকথা…(অ্যাডর্ন বুকস্, ২০১৪), ও সংশয়সুর (চৈতন্য, ২০১৬)। বাংলাদেশে আগামী প্রকাশনী ও ভারতে হাওয়াকল পাবলিশার্স একযোগে প্রকাশ করছে শিমুল সালাহ্উদ্দিনের সাক্ষাৎকার সিরিজ, শিমুল সাক্ষাৎমালা। এই সিরিজের প্রথম দুটি বই কবির মুখোমুখি কবি ও সমরে সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ প্রকাশিত হয়েছে।