নবিজির ইসরার ঘটনা জানাজানি হলে পুরো কুরাইশ ঠাট্টায় মেতে ওঠে। বিদ্রুপের স্বরে কেউ আবু বকরকে সেটা জানালে তিনি নির্দ্বিধায় রাসুলের দাবি সত্য বলে স্বীকৃতি দেন। লাভ করেন ‘সিদ্দিক’ উপাধি।
ইসলামের পক্ষে দাওয়াত দিতে গিয়ে কেবল নির্যাতন-নিপীড়নই সহ্য করেননি; হাসিমুখে স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন সুদূর মদিনায়। প্রিয় রাসুলের সঙ্গে থেকেছেন গারে হেরায়; উহুদ-বদর, হুনাইন আর হুদায়বিয়ায়ও তাঁকে ছেড়ে যাননি। ছায়ার মতো যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি রাসুলের পাশে থাকতেন। তাঁকে পরামর্শ দিতেন, সমর্থন ও শক্তি জোগাতেন।
আবু বকর আগে থেকেই জ্ঞানী মানুষ ছিলেন; কিন্তু নবিজির সাহচর্য তাঁর ভেতর নেতাকুশলের জন্ম দিয়েছিল। তাই প্রিয়তম রাসুলের ইনতিকালে সবাই দিশেহারা হয়ে পড়লেও দক্ষ নেতার মতো শান্ত সিদ্ধান্তে তিনি পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরেন। রোম ও পারস্য বিজয়ে রাসুলের অভিযান বহাল রেখে বহিঃশক্তিগুলোকে যেমন দমন করেছেন, তেমনি শক্তহাতে কোমর ভেঙেছেন রাষ্ট্রের ভেতর লুকিয়ে থাকা শঙ্ক-শকুনদেরও। তিনি বন্ধু হিসেবে যেমন শতভাগ বিশ্বস্ত ছিলেন, নেতা আর সমরবিদ হিসেবেও ছিলেন প্রাজ্ঞ, যোগ্য ও সাফল্যের শীর্ষস্থানে আরোহণকারী।
.
ত্যাগ ও আনুগত্য, সাহস ও চরিত্রসুষমায় মুসলিমদের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা.। তাঁরই হাতে ডালপালা মেলে জগদ্ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে রাসুলে আরাবির স্বপ্ন। বিস্ময়কর ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া সেই ইবনুল খাত্তাব বাকি জীবন রাসুলপ্রেমে উৎসর্গিত ছিলেন। নাঙা তরবারি হাতে মুহাম্মাদের শির বিচ্ছিন্ন করতে বেরোনো সেই উমর একসময় মুসলিমদের সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের খলিফা হয়ে ওঠেন। ইসলামগ্রহণের প্রথম দিনই তিনি মক্কার মুশরিকদের সামনে সত্যের বিক্রমী প্রকাশ ঘটিয়েছেন। নবিজি ও সিদ্দিকে আকবরের পর ইসলামের সুমহান সত্য তিনি পৌঁছে দিয়েছেন অর্ধজগতের মানবসমাজে।
তিনি অবদান রেখেছেন ইসলামের সর্বময় বিস্তার ও বিকাশসাধনে। তাঁর সময়ে ইসলামের সামরিক বিস্তার যেমন ঘটেছে, তেমনি রাজনীতি ও সংস্কৃতির শৃঙ্খল বিকাশেও তিনি গভীর ভূমিকা রেখেছেন। পাথর ও প্রতিমাপূজার ভূমিগুলোতে কৌশলে ইসলামি সভ্যতার বীজ বুনেছেন। ব্যক্তি হিসেবে উমর কতটা উজ্জ্বল ও উত্তম স্তরের ছিলেন, রাসুলের একটি হাদিস থেকেই তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট—রাসুল সাঃ বলেছেন, ‘যদি আমার পর কেউ নবি হতো, তবে সে হতো উমর।’
.
খুলাফায়ে রাশিদার অন্যতম এই মহান খলিফার জীবনী মলাটবদ্ধ হয়েছে প্রখ্যাত ইতিহাস-সংকলক ড. মুহাম্মাদ সাইয়িদ ওয়াকিলের কলমে। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে উসমান রা.-এর জীবনের শুরুলগ্ন থেকে খিলাফতের দায়িত্বগ্রহণ, দায়িত্বপালনসহ তাঁর হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত আখ্যান। বইটির অধ্যয়নে পাঠক তাঁর জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে অবগত হওয়ার পাশাপাশি আবিষ্কার করতে পারবেন লাজুক সাহাবি হিসেবে পরিচিত উসমানের ব্যক্তিসত্তার অপরিচিত আরেকটি অধ্যায়।