মানুষের ভেতরে একটি জায়গা থাকে— যেখানে শব্দ পৌঁছায় খুব ধীরে, আর নীরবতা গিয়ে বসে ঘরের সবচেয়ে উঁচু তাকটায়। সেই নীরবতার নাম কখনও ভালোবাসা, কখনও অপেক্ষা, কখনও বা অনুচ্চারিত দীর্ঘশ্বাস। ‘ভালোবাসার অক্সিজেন’ পড়তে পড়তে যে প্রথম অনুভূতিটি পাঠককে ছুঁয়ে যাবে, তা এই নীরবতারই অদৃশ্য স্পন্দন।
কবি ইন্নাস আলি রতন রচিত কবিতাগুলোতে প্রেম কোনো উচ্ছ্বাসময় তরঙ্গ নয়, বরং এক গভীর স্রোত— যা প্রবাহিত হয় মানুষে মানুষে দূরত্ব, ভাঙন ও ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে। কবিতার পাতায় পাতায় বারবার মনে হয়েছে— মানুষের ভেতরের ভালোবাসা অনেক সময় প্রকাশিত হয় না, ঠিক যেমন অক্সিজেন নিজেকে চোখে দেখায় না, কিন্তু বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে। কবি এই অদৃশ্য কিন্তু তীব্র অনুভূতিকে শব্দে ধরেছেন অসাধারণ সংবেদনশীলতায়।
‘ভালোবাসার অক্সিজেন’ বইয়ের কিছু কবিতা পড়ে মনে হবে এখানে প্রেম আর যন্ত্রণা একাকার হয়ে গেছে। মনে হয়েছে, ভালোবাসার কাছে আমরা যতটা এগিয়ে যাই, ততটাই নিজের ভিতরের দুর্বলতাকে চিনতে শিখি। সেই নিজেকে চিনে ফেলার ভয়, নিজের আন্তরিকতার বিপরীতে দাঁড়ানো অনিশ্চয়তা— এসবই কবিতাগুলোতে রক্তের মতো দোলা দিয়ে ওঠে।
এই বইটির কিছু কিছু কবিতা মানুষের ভেতরের ভাঙন, পুনর্গঠন, বেঁচে থাকা এবং অনুভূতির গভীর লড়াইয়ের মানচিত্রস্বরুপ। একটা বই তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন পাঠকের ভেতরে নড়েচড়ে বসবে নিজের কোনো দুঃখ, কোনো গোপন আকাঙ্ক্ষা, বা কোনো স্মৃতি। ‘ভালোবাসার অক্সিজেন’ ঠিক সেই কাজটাই করেছে— পাঠককে তার নিজের অপ্রকাশিত অনুভূতিগুলোর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। হয়তো এটাই ভালোবাসার আসল রূপ।
এই বইয়ের পাঠক নিজেকে একসময় খুঁজে পাবে এমন এক জায়গায়— যেখানে হৃদয়ের গভীরতম কক্ষেও আলো পড়ে, আবার অন্ধকারও থিতু হয়ে থাকে। সেই আলো-অন্ধকারের নীরব পথে হাঁটতে হাঁটতে আমিও ডুবে গিয়েছিলাম শব্দের অজস্র কণায়। এই বই যারা পড়বেন— তারা হয়তো বুঝতে পারবেন, ভালোবাসা আসলে কখনও বলা হয় না। ভালোবাসা শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই বিরাজমান।
কবি ইন্নাস আলি রতনের নতুন বই ‘ভালোবাসার অক্সিজেন’র জন্য বরাবরের মতামত শুভকামনা রইল।