"তিন উপন্যাস" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: দক্ষ, সৎ, নিষ্ঠাবান ও মানুষের সেবায় নিবেদিত পদস্থ কর্মকর্তা তিনি। শুদ্ধ সংগীতের মহান শিল্পী এবং সাধক তিনি । হাসপাতালের শয্যা থেকে ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি এহতেশাম বেলালকে । এরকম বিশাল ব্যক্তিত্বের আহবানে সাড়া না দিয়ে পারে না তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী এহতেশাম বেলাল। তবে, আবুল ফাত্তাহর অসুস্থতা নিয়ে মিসেস ফাত্তাহর মতাে বেলালের মনেও প্রশ্ন দেখা দেয়- আসলেই কি অসুস্থ আবুল ফাত্তাহ? নাকি তার দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা এবং সংগীত প্রতিভার মতাে অসুস্থতার ভান করছেন তিনি? ----------------------------------
১৯৭১ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের চব্বিশতম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক বাগানপার্টির আয়ােজন করেছেন ব্রিগেডিয়ার বখতিয়ার বাগােলা পার্টির শেষ চমকের উপকরণ চব্বিশ জন বাঙালি বন্দিকে হাজির করা গেল না। কারণ, মুক্তিযােদ্ধারা ঢুকে পড়েছে গ্যারিসনে। ছিনিয়ে নিয়েছে তারা বন্দিদের । ব্যর্থতা আর পরাজয়ের গ্লানিতে আকাশে গুলি ছোঁড়েন বাগােজা। তার পাশে এসে দাঁড়ায় ধর্মের লেবাসধারি দুই বাঙালি রাজনীতিবিদ। আশ্বস্ত করে তারা বাগােজাকেপাকিস্তান বাহিনী পরাজিত হলেও অব্যাহত রাখবে তারা এ ‘ধর্মযুদ্ধ'। ----------------------------------
থানা থেকে ফেরার সময় অনুভব করে ফুলবানু- মা হতে চলেছে সে। কুশলি হাতে অসংখ্য মানবশিশুকে পৃথিবীর আলােয় নিয়ে এসেছে ফুলবানু। মাতৃত্বের আকাঙ্খ ছিল। তারও। কিন্তু এভাবে মা হতে তাে চায় নি সে। চায় না কেউই। রিকশাভ্যান থেকে নেমে বসে পড়ে সে ফসলের ক্ষেতের পাশে । নিজের পেট চেপে বমি করে ফেলে দিতে চায় সে তার গর্ভের অনাকাঙ্খিত মানুষের ভ্রুণটিকে । ফুলবানুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে কিচির-মিচির করে ওঠে শেষ বিকেলের পাখিরা । ফসলের গাছগুলাে নুইয়ে পড়ে প্রবল দীর্ঘশ্বাসের মতাে বয়ে যাওয়া বাতাসের ভারে।
হারুন রশীদ এর জন্ম ২০ জানুয়ারি ১৯৬২, সিরাজগঞ্জে। পিতা- এস. এম. শাহজাহান। মা- বীণা খানম। লেখাপড়া করেছেন সিরাজগঞ্জের বি. এল. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশাগত জীবন শুরু হয় সাংবাদিকতা দিয়ে। কাজ করেছেন 'বাংলাদেশ অবজারভার'-এ। যুক্ত ছিলেন চিত্রালী, আগামী, তারকালোক, কিশোর তারকালোকসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীর সাথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। ১৯৮৬ সালে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে। অবসর নিয়েছেন সরকারের গ্রেড-১ কর্মকর্তা হিসেবে। লেখালেখির পাশাপাশি শৈশব থেকে নাটকের সাথে যুক্ত তিনি। বাংলাদেশের বহুল আলোচিত আরণ্যক নাট্যদলের সদস্য। অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক। সিরাজগঞ্জের খ্যাতনামা নাট্য সংগঠন 'তরুণ সম্প্রদায়'-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। জাতীয় পর্যায়ের আবৃত্তি সংগঠন 'স্বরশ্রুতি'র প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন তিনি। নাট্যকার হিসেবে পেয়েছেন টেনাশিনাস পদক। কাহিনী ও সংলাপের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার লেখা উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম- উপন্যাস: যুদ্ধে যাবোই, ১৪ই আগস্টের বাগানপার্টি, তিনি, শেষ বিকেলের রোদ, শোকের শহরে, ক্যায়ফা হাল; কাব্যগ্রন্থ: ইচ্ছেঘুড়ি; গল্পগ্রন্থ: পুতুলের ঘর ও প্রান্তজনের প্রভু এবং আত্মজীবনীমূলক লেখা: আমলাবেলা। হারুন রশীদ-এর লেখা উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটক: রাজনেত্র, স্বপ্নপথিক, জট, জলদাস, হেফাজত, পঞ্চনারী আখ্যান, নিশিকুটুম্ব, সখিপুরপালা, বোধ, যা ছিল অন্ধকারে ইত্যাদি। বেশ কিছু পথনাটক লিখেছেন। লিখেছেন অসংখ্য টেলিভিশন নাটক।